সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আমার ভাইয়ের হত্যা মামলার রায়ের আদেশে নয় বরং রায় কার্যকর হলেই সন্তুষ্টি মিলবে। দুই প্রধান আসামির ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, কিন্তু সাতজনের খালাস নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। যেদিন রায় কার্যকর হবে সেদিন সন্তুষ্ট হতে পারব। এসব কথা বলেছেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার তিন বছর পূর্তিতে মামলার বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় শারমিন বলেন, তিন বছর অপেক্ষা করেছি আর কত অপেক্ষা করব। এখনও রায় কার্যকর হয়নি। এই রায় আটকে আছে। এই ঘটনা কোনো সাধারণ ঘটনা হতে পারে না। আমরা রায় কার্যকর চাই।
শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, আমার ভাই সৎ অফিসার ছিলেন। তার সামনে কোটি টাকা রাখলেও তার টাকা না হলে ধরবে না। আমার ভাইকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করলে আমরা সহজে মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু পোষাক পরিধান করে হত্যা করা মানে সন্ত্রাসীর চেয়ে কম না। আমার ভাই ট্রেনিংপ্রাপ্ত দক্ষ অফিসার ছিলেন। তাকে এই সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এখনও তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।
তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে মনে হয় সিনহা এখনও মরেনি। আমার ভাই একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের জন্য প্রাণ দিতে সে সব সময় প্রস্তুত ছিল।
বক্তব্য শেষে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেন, আমার পরিবার আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিকদের কারণে আমরা আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম, নারী নেত্রী নাজরিন সরওয়ার কাবেরি, ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফাসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের (এপিবিএন) চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ৫ আগস্ট পুলিশের ৯ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ওসি প্রদীপ। চার মাস দশ দিন পর কক্সবাজার আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগপত্রে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে নয়জন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য, তিনজন এপিবিএনের সদস্য এবং তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে যাবজ্জীবন আর সাতজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে প্রদীপ-লিয়াকত ছাড়া তিনজন পুলিশ সদস্য আর তিন জন পুলিশের সোর্স। বর্তমানে সব অভিযুক্তই কারাগারে আছেন।
মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
মামলা থেকে অব্যাহতি পান- পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।
জেডএ