সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা বংশীবাদক নিজাম উদ্দিন (৮০)। বয়স যখন ২০ বছর তখন শখ থেকেই বাঁশি বাজানো শুরু। একসময় বাঁশির সুর নেশায় পরিণত হয় এবং এটিই হয়ে ওঠে নিজাম উদ্দিনের জীবিকানির্বাহের একমাত্র অবলম্বন।
বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি একসময় বাঁশি বানিয়ে হাটেবাজারে বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে এখন আর বাঁশি বানাতে পারেন না। কিন্তু এখনো তার বাঁশির সুরের মূর্ছনা বিমোহিত করে স্থানীয়দের।
নিজাম উদ্দিন জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুই স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা যে যার সংসার করছেন। তাই তেমন একটা খোঁজ-খবর রাখেন না। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই নিজাম উদ্দিনের।
স্থানীয়রা জানান, নিজাম উদ্দিন এই এলাকার পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন ধরেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজান তিনি। হাট-বাজার, রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে তার। বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরা যা দেন তাতেই চলে সংসার। তার বাঁশির সুরে পাগল হন দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলি বেগম। স্ত্রী-সন্তান আছে জেনেও নিজামকে বিয়ে করে ঘর বাঁধেন তিনি।
নিজাম উদ্দিন জানান, শখ করেই এই পেশায় এসেছিলেন। যুবক বয়সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করতেন। তখন আয় রোজগারও ভালো ছিল। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হতো। সেই রোজগার দিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করেছেন। কিন্তু এখন বয়স বেড়েছে। শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতেও পারেন না, বাজাতেও পারেন না। এখন যতটুকু পারেন রেলওয়ে স্টেশনে বাঁশি বাজান। তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে যে যা দেন তাই দিয়ে দুই স্ত্রী নিয়ে কোনোরকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন।
দ্বিতীয় বিয়ের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী ফুল বেগম বাঁশির সুরে পাগল হয়ে আমার কাছে চলে আসেন। তখন আমি বিবাহিত ছিলাম, আমার বাচ্চাও ছিল। কিন্তু সে আমার বাঁশির সুরে এতটাই পাগল ছিল তাকে কোনো কিছুতেই বোঝানো যায়নি। পরে তার পরিবার নিরুপায় হয়ে আমার কাছ বিয়ে দেয়। পরে সে সংসারেও আমার ছেলেমেয়ে হয়।
নিজাম উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী বুছন বেগম বলেন, আগে বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করে ভালোই আয়-রোজগার করতেন স্বামী। কিন্তু এখন বয়স বাড়ায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতে পারেন না। আর এখন প্রায় অসুস্থ থাকায় বাঁশিও বাজাতে পারেন না। এখন খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলাতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাব হোসেন, ইয়ামিনসহ আরও কয়েকজন জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখছেন নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশনে বাঁশি বাজান। স্থানীয় লোকজন ও রেলের যাত্রীরা যা দেন তা দিয়েই তিনি সংসার চালান। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা তার বাঁশির সুর শুনে এখানে সময় কাটান।
ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের শেখ বলেন, নিজাম উদ্দিন ছোটকাল থেকেই বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। তবে এখন আগের মতো শরীর চলে না। বিষয়টি নজরে আসার পর তার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আরও কোনো সহযোগিতা লাগলে দেওয়া হবে।
জেবি