সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
উদ্বোধন হওয়ার প্রায় দুই বছর পর চালু হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীদের জন্য নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। তবে চালু করার দিনই বঙ্গমাতার ম্যুরালের উদ্বোধনী নামফলক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে সাবেক প্রাধ্যক্ষ প্রকাশ দাশগুপ্তের নাম। বিষয়টি অসৌজন্যমূলক ও নৈতিকতা বিরোধী বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতার জন্মদিন পালনের মাধ্যমে উদ্বোধন হওয়ার ২৩ মাস পর হলটি খুলে দেওয়া হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হলে শিক্ষার্থী তোলা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হলে ৩১২ জন ছাত্রীর আবাসনের সুবিধা রয়েছে। আসন বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৬০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৪০ শতাংশ মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা পাবেন। আপাতত বিভিন্ন হলে অবস্থানরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে হল চালুর দিনই হলে স্থাপিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরালের উদ্বোধনী নামফলক থেকে সাবেক প্রাধ্যক্ষ প্রকাশ দাশগুপ্তের নাম মুছে ফেলেছে বর্তমান হল প্রশাসন। ম্যুরালটি প্রকাশ দাশগুপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ২০২১ সালের ০৮ আগস্ট হল প্রাঙ্গণে উন্মোচন করা হয়।
ম্যুরাল উদ্বোধনের ফলকে উদ্বোধক হিসেবে উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে সেই সময়কার প্রভোস্ট প্রকাশ দাশগুপ্তের নাম লেখা ছিল। তবে সেই উদ্বোধন ফলক থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে তার নাম। বর্তমানে হলটির প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক উদিতি দাশ।
মঙ্গলবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ওই ম্যুরালটি উদ্বোধন ফলকে দেখা গেছে, উপাচার্য শিরীণ আখতারের নাম ছাড়া বাকি অংশ রঙের আবরণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের বর্তমান প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক উদিতি দাশ বলেন, ‘এই হলটি ও অতীশ দীপঙ্কর হলের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান পালি বিভাগের অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষুর। কিন্তু তার নাম কোথাও রাখা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি আপত্তি জানিয়েছেন। তাই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নামফলক থেকে সাবেক প্রাধ্যক্ষের নাম আপাতত রঙ দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার এটি (রঙ) তুলে ফেলব। এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়।’
হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ প্রকাশ দাশগুপ্ত বলেন, ‘একটা নবনির্মিত হলের আসবাবপত্র ক্রয়, সাজানো, নীতিমালা থেকে শুরু করে ছাত্রী উঠানোর সব প্রক্রিয়া আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি হলের উদ্বোধনও আমার তত্ত্বাবধানে হয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই স্ট্যান্ড রিলিজের মাধ্যমে আমাকে প্রভোস্ট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ আজ হলে ছাত্রী উঠানোর দিন নামফলক থেকে আমার নামও মুছে দেওয়া হল। জানি না আমার প্রতি প্রশাসনের কেন এত ক্ষোভ। তবে এ ধরনের নাম মুছার সংস্কৃতি কোনো প্রশাসনের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।’
বিষয়টিকে অসৌজন্যমূলক আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ। উদ্বোধনের সময় যখন একজনের নাম ছিল, তারমানে প্রশাসনের সম্মতিতেই ছিল। যে কোনো কারণেই হোক একজনের সঙ্গে মতপার্থক্য বা মতো বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, তাতে কী একজনের নাম ফলক থেকে মুছে দেওয়া যায়? এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হতে পারে না।’
এদিকে হলের কার্যক্রম শুরু করার জন্য চার ধর্মের চারজন আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নিরাপত্তা প্রহরী, অফিশিয়াল কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও পর্যাপ্ত লোকবল অন্যান্য হল থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জেবি