দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কোলেপিঠে আদর যত্নে করে তিল তিল করে ছেলেকে বড় করেছিলেন বাবা। বড় হওয়ার পর ছেলেকে সাবলম্বী করতে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসে। বাবা আর ছেলের সম্পর্কও ছিলো মধুর। তবে সেই সন্তানই যে বাবাকে হত্যা করবেন তা হয়তো কল্পনা করতে পারেনি কেউ। এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়ার। আর বাবাকে হত্যার পরপরই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় পাষণ্ড ছেলেও।
স্থানীয়, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চেরাগ আলী বেপারী কান্দি এলাকার কৃষক মকবুল হোসেন মোল্লার প্রথম স্ত্রী হাসিনা বেগম ২৯ বছর আগে তিন সন্তান রেখে মারা যায়। এরপর মকবুল বিয়ে করেন সেলিনা বেগমকে। সেই ঘরে জন্ম নেয় চার সন্তান। তবে মকবুল হোসেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী আগের ঘরের সন্তানদের ভালোবাসতেন। আগের ঘরের একমাত্র ছেলে সন্তান রুবেল মোল্লা বড় হওয়ায় পর তাকে সাবলম্বী করতে পাঠিয়েছিলেন মালেশিয়া। দীর্ঘ ১৪ বছর প্রবাস জীবন শেষে দেড় বছর আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে দুই স্ত্রীর সন্তানদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য বাবা মকবুল হোসেন মোল্লা বাড়ির পাশেই ছেলে রুবেল মোল্লার জন্য তৈরি করে দেন আলাদা বাড়ি। এছাড়াও বিয়ের জন্য দেখা শুরু করেন পাত্রীও। বছর খানেক আগে নতুন বাড়ির আঙ্গিনায় বেশ কিছু আম ও পেয়ারা ফলের গাছ লাগিয়ে দেন মকবুল হোসেন। গতকাল রোববার কোনো কারণ ছাড়াই গাছগুলো কেটে ফেলে ছেলে। বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় মকবুল হোসেন আর ছেলে রুবেল মোল্লার কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বাবা মকবুল হোসেনকে। পরে তার ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে দ্রুত উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মৃত ঘোষণা করে কতব্রত চিকিৎসক। এদিকে রুবেল মোল্লাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মাঠের মধ্যে। পুলিশের ধারণা ঘটনা ঘটিয়ে পালানোর সময় মাটিতে পড়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা ছেলে রুবেল মোল্লাও। পরে পুলিশ দুটি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সরেজমিনে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক মানুষের ভীড়। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করছেন সবাই। বাড়ির সামনের পারিবারিক কবর স্থানে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, চিৎকার চেচামেচির খবর পেয়ে দৌঁড়ে এসে দেখি মকবুল মোল্লা মাটিতে পড়ে আছেন। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন তিনি মারা গেছেন। এদিকে তার ছেলে রুবেল মোল্লাকে খোঁজাখুঁজি করলে একটি মাঠের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সন্তান দ্বারা বাবার মৃত্যু এটা মেনে নেওয়ার মত নয়। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক এটাই আমাদের দাবি।
মকবুল হোসেন মোল্লার ভাই আনোয়ার মোল্লা বলেন, রুবেলের মা মারা যাওয়ার পর আমার ভাই মকবুল আবার আরেকটি বিয়ে করেন। তবে পরের মা এবং বাবা দুজনেই সন্তানকে ভালোবাসতেন। ছেলের সাথে বাবার মধুর সম্পর্ক ছিলো। এভাবে এই ঘটনা ঘটবে তা কখনো কল্পনা করতে পারি না।
এ ব্যাপারে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এফএইচ/