দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামে তুচ্ছ ঘটনায় কাজী ও প্রামাণিক গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহতের ঘটনায় থানায় একপক্ষের মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে কাজী গ্রুপের আমজাদ আলী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে।
মামলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা প্রামাণিক গ্রুপের আহত ৪ জনকে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে তিনজনকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা আদালত প্রামাণিক (৬০)। তার পিঠে ধারালো অস্ত্রের কোপের ক্ষত রয়েছে। একই গ্রামের তাহের প্রামাণিকের ছেলে রাকিব প্রামাণিক (৩৫)। তার মাথা ফাঁটানো এবং স্বপন মণ্ডলের স্ত্রী ইতি খাতুন (৩৭)। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও গুরুতর অসুস্থ থাকায় গ্রেপ্তারকৃত তাহের প্রামাণিকের আরেক ছেলে রাজিব প্রামাণিক (৩২)-কে পু্লিশ পাহাড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রাখা রয়েছে।
দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন থানার উপপরিদর্শক মো. আবু সায়েম। তিনি বলেন, পদ্মায় নৌকা ছিদ্র করাকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কাজী গ্রুপ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরাও সংঘর্ষে আহত ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কসবা গ্রামে মন্টু কাজী গ্রুপের সঙ্গে আদালত প্রামাণিক গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। কাজী গ্রুপের লোকজন চাষাবাদের পাশাপাশি পদ্মা নদীতে মাছ ধরার কাজ করেন। নদীতে তাদের বেশকিছু ডিঙি নৌকা রাখা হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে প্রামাণিক গ্রুপের সালাম কাজী গ্রুপের পাঁচটি নৌকার তলা ছিদ্র করছিল। সেসময় সালামকে হাতেনাতে ধরে কিছুক্ষণ আটকে রাখার পরে ছেড়ে দেন কাজী গ্রুপের লোকজন। পরে সালাম দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটাসহ তার লোকজন নিয়ে কাজী পাড়ায় আসে। সেসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১৫ জন আহত হন।
আহতরা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়ন আদালত প্রমাণিক, তার ছেলে জিসান প্রমাণিক, তাহের প্রমাণিকের ছেলে রাজিব ও রাকিব, হাসেম সরদারের ছেলে শুভ, আজমতের ছেলে রাহিম, শহীদ কাজীর ছেলে ছালাম কাজী, মিজানুর রহমান মন্টু, বিল্লাল হোসেন, শহীদ হোসেন, মনটু কাজী, ঝন্টু কাজী, জিন্দার শিকদার, সাইদুল শিকদার, সাজেদা খাতুন।
গত শনিবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে আলোচনা হয় আদালত প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাজী গ্রুপের লোকজন আমাদের একটা ছেলে আটক করে রেখেছিল। তা জানতে গেলে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের অন্তত ৭ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। থানায় মামলা করা হবে।
বিকেল ৫টার দিকে কসবা গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মোড়েমোড়ে পুলিশের টহল। দুই পক্ষের লোকজন পৃথক স্থানে জড়ো হয়ে আছেন। উভয়পক্ষের বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুরের ক্ষত।
প্রামাণিক গ্রুপের এক নারী বলেন, আমাদের লোকজন সব হাসপাতালে। সেই সুযোগে জাদু কাজী ও মাদু কাজীসহ ১৫ -২০ জন এসে আমাদের সব ঘর ভাঙছে। গরু ও মালামাল নিয়ে গেছে।
রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, আহত রাজিব বেডে শুয়ে আছেন। তার মাথা ও হাতে সাদা ব্যান্ডেজ বাধা। ডান হাতে হ্যান্ডক্যাপ পড়ানো। তাকে পাহাড়ায় রেখেছে পুলিশ।
আহত রাজিব বলেন, আহতে হয়ে হাসপাতালে চারজন ছিলাম। সকালে তিনজনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আমরাও মামলা করবো।
মামলার বাদী আমজাদ আলী বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় প্রামাণিক গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সুষ্ঠ বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি।
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মাছ ধরা নৌকা ছিদ্র করাকে কেন্দ্র দু'পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় একপক্ষ মামলা করেছে। অপরপক্ষ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরএ