সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরতে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সৌদ আরব গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের তিন যুবক। দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন ওই যুবকেরা জীবিত দেশে ফিরতে বারবার পরিবারের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন। এতে ধারদেনা করে সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে হতাশায় ভুগছেন স্বজনরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, সতর্কতার সহিত বিদেশ যেতে হবে বলে জানিয়েছেন রেঞ্জ ডিআইজি।
কর্মের সন্ধানে সম্প্রতি সৌদি আরবে পাড়ি জমান ময়মনসিংহের নান্দাইলের দেউল ডেংরা গ্রামের আব্দুল হেলিমের ছেলে আনোয়ার হোসেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুল গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে শাহ আলম ও ধোবাউড়া উপজেলার পশ্চিম সোহাগী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মাসুম আহমেদ। ভালো বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬—৭ লাখ টাকা নিয়ে সৌদি আরবে পাঠান ঢাকার বনানী সৈনিক ক্লাবে অবস্থিত খান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিস্ট। দুই মাস আগে তারা বিদেশে গেলেও এখনো কথা অনুযায়ী দেওয়া হয়নি কোনো কাজ। খেয়ে না খেয়ে সেখানে তারা পার করছেন মানবেতর জীবন যাপন। পরিবারের কাছে প্রতিনিয়ত বার্তা পাঠাচ্ছেন জীবিত দেশে আসার ব্যবস্থা করতে। এদিকে ধারদেনা করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ছেলেদের বিদেশ পাঠিয়ে চরম অশান্তিতে ভুগছেন স্বজনরা।
ভুক্তভোগি শাহ আলমের বাবা জালাল উদ্দিন বলেন, ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলেন পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য। এখন ছেলেকে জীবিত পেলেই বাঁচি, প্রায় দুই মাস ধরে তারা সেখানে গেলেও কোন কর্মে যোগ দিতে পারেনি। এজেন্সির লোকজনের মোবাইলও বন্ধ রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ হচ্ছে না। ছেলেরা খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে, সরকারের কাছে শুধুমাত্র ছেলেকে দেশে ফেরানোর সহযোগিতা চাই।
আরেক ভুক্তভোগি আনোয়ার হোসেন বাবা আব্দুল হেলিম বলেন, ধারদেনা করে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে সৌদি পাঠিয়েছি, পাঠানোর পর থেকেই সংসারে কোন খাওয়া—দাওয়া নেই। কারণ ছেলে আমার ভালো নেই। কোম্পানী মাসে ১৪শ রিয়েল বেতন দেওয়ার কথা বললেও কোন কাজই তাদের দেয়নি। যারা মানুষের সরলতা নিয়ে খেলছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।
ভিডিও বাতার্য় ভুক্তভোগি যুবকরা জানান, খান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিস্টের মালিক খান সালাউদ্দীন সোহাগের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। সে অন্যের একটি এজেন্সির মাধ্যমে আমাদের বিদেশ পাঠিয়ে দালালি খেয়েছে। সে মূলত বিদেশগামী মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদি ধরে এমন প্রতারণা করে আসছে। এখানে আমাদের থাকা—খাওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে, কয়েকদিন থাকলে মরেও যেতে পারি। প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশে জীবিত ফিরতে চাই।
মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে খান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিস্টের মালিক খান সালাউদ্দীন সোহাগ বলেন, আমি এই এজেন্সির মূল মালিক না হলেও একজন অংশীদার। যার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। চুক্তি অনুযায়ী ভিসার সব শর্ত মানা হয়েছে। তারা কাজ না করলে আমার কিছু করার নেই।
বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ময়মনসিংহ অফিসের প্রধান সহকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন, তার বিরুদ্ধে মামলা করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড.আশরাফুর রহমান বলেন, বিদেশে গিয়ে হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগিরা আইনের আশ্রয় নিলে তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া যারা বিদেশে যাবেন বা যাচ্ছেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আমি যাচ্ছি, তার কোনো বৈধতা আছে কি না সেগুলো খুঁটিনাটি দেখা প্রয়োজন। যেনো কোনো কারণে সারা জীবনের অর্জিত অর্থ বিফলে না যায়।
এফএইচ/