সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন সম্পর্ক জোড়ালোর পাশাপাশি চাঙ্গা হবে ঝিমিয়ে পড়া অনৈতিক অবস্থা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কয়লা ব্যবসায়ীদের দুইদিনের নতুন স্বপ্ন বুনছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশে ভারত ইন্দোনেশিয়া কয়লা রপ্তানি করে আসছেন। ইন্দোনেশিয়ার কয়লার চেয়ে গুণে ও মানে ভারতের কয়লা উন্নত। তাই এদেশে ভারতের কয়লার চাহিদা বেশি। বিগত কয়েক বছর ধরে ইন্দোনেশিয়া থেকে কম দামে কয়লা আমদানি হওয়ায় হালুয়াঘাটের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কয়লা আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। ফলে সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত থেকে মাত্র ৯৬৪ টন কয়লা আমদানির পর থেকে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে বন্দরগুলোতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি কয়লা রপ্তানিতে ভারত আগ্রহ দেখালে এদেশের ব্যবসায়ীরা তাদেরকে নিমন্ত্রণ জানান। গত বৃহস্পতিবার মেঘালয় রাজ্যের সাবেক কয়লা এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা বিজয় সিং যোশীসহ সাত সদস্যের ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসেন। তাদের সঙ্গে হালুয়াঘাটে শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় এদেশের ব্যবসায়ীদের।
কড়ইতলী গোবরাকুড়া আমদানি রপ্তানি গ্রুপের মহাসচিব অশোক কুমার সরকার অপু বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মেঘালয় রাজ্যের সাবেক কয়লা এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা বিজয় সিং যোশীসহ সাত সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের রুদ্ধদার বৈঠক হয়েছে। এতে হালুয়াঘাট স্থলবন্দরকে ব্যবসার প্রাণ দাবি করে বিজয় সিং জোশি পুরোদমে কয়লা রপ্তানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার প্রত্যাশা এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ টানা পোড়নের সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। সেই লক্ষে গত বুধবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। আশা রাখছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে কয়লা আমদানি শুরু হলে জমজমাট হয়ে উঠবে স্থলবন্দরগুলো। তিনি আরও বলেন, স্থলবন্দরে নিয়মিত চার শতাধিক ব্যবসায়ীসহ প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। এই খরা কাটিয়ে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে দুটি স্থলবন্দর।
কড়ইতলী কোল অ্যান্ড কোক ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ সোহেল বলেন, ভারত এ বছর বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই দুটি স্থলো বন্দরের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে এলসি কার্যক্রম শুরু করেছে। এবছর টনপ্রতি কয়লা ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করতে হচ্ছে ১১৫ ডলারে। এছাড়া ট্যাক্স, লোড-আনলোডসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। এতে খরচ কিছুটা বেশি মনে হলেও চাহিদা থাকায় মোটামুটি ব্যবসা হবে। শ্রমিকরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ভালো ব্যবসা হলেও এরপর নানা কারণে কয়লা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী শ্রমিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন।
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া বন্দরের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, ইতোমধ্যে কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। এটি উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর। দুটি স্থল বন্দর দিয়ে গত বুধবারে ৯৬ টন এবং বৃহস্পতিবারে ৭২ টন কয়লা এসেছে। পুরোদমে কয়লা আমদানি শুরু হতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা কয়লা আমদানি রপ্তানিতে এবছর বদ্ধপরিকর।
১৯৭৯ সালে কড়ইতলী ও ১৯৯৭ সালে গোবরাকুড়া শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হয়। স্থলবন্দর দুটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ভারতীয় রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের অন্তর্কোন্দল এবং ভারতীয় পরিবেশবাদীদের মামলায় দেশটি থেকে কয়লা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৬০ ব্যবসায়ীর ৩৭২টি এলসির বিপরীতে ভারতে ৩৯ হাজার টন কয়লা আটকে যায়। গত বছরের ১১ মার্চ বন্দর দুটোকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়।
আরএ