সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার ভাড়াবাড়ি থেকে তানিয়া খাতুন (২২) নামের এক নারী ক্লিনিক কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার সেলিম মিয়ার বাড়ির তৃতীয়তলা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তানিয়া খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয়রা তানিয়াকে দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়া খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োজিত সদর থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরাফাত ইসলাম।
তিনি বলেন, রাত দশটার পর তানিয়া খাতুনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তবে নিহত তানিয়া খাতুনের বড় ভাই বেল্টু রহমানের দাবি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড। আমার বোনকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রেখেছে তার স্বামী আলামিন৷
নিহত তানিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ঝোড়াঘাটা গ্রামের মাহাতাব আলীর মেয়ে এবং দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বর্ণকার আলামিনের স্ত্রী। স্বামী আলামিনকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার সেলিম মিয়ার তৃতীয়তলায় ভাড়া থাকতেন তানিয়া খাতুন। তাওহীদ ইসলাম নামে একটা ছয় বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তানও আছে।
নিহত তানিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আখিঁতারা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়ার কাজ করতেন। সে অত্যান্ত জেদি মেয়ে ছিল বলে তার একাধিক সহকর্মী ও বাড়ি ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেদের কারণেই সে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা তাদের।
তবে তানিয়া খাতুনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শনিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হন্তান্তর করবে পুলিশ।
সেলিম মিয়ার বাড়ির এক নারী ভাড়াটিয়া নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, তানিয়া খাতুন তার স্বামীর সঙ্গে প্রায় সময় অসদাচরণ করতেন। কয়েকদিন যাবত স্বামী আলামিন তার নিজের বাড়িতে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু তানিয়া যেতে দিতেন না। তার সম্মতি ছিল না সে তার পৈতৃক বাড়িতে যাক। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কয়েকদিন যাবত মনোমালিন্য হয়ে আসছিল। আমাদের ধারণা অতিরিক্ত জেদ ও স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই তানিয়া খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নিহত তানিয়ার স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। যখন এই ঘটনা ঘটে তখন আমি ওই বাড়িতে ছিলাম না। যদি আড়ালে অন্য কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে প্রশাসনের তদন্তে রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে করি।
আখিঁতারা জেনারেল হাসপাতাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিহত তানিয়ার এক নারী সহকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এখানে প্রায় ৪০ দিনের মত কাজ করছে তানিয়া। রাতে হঠাৎ শুনতে পায় তানিয়ার মৃত্যুর সংবাদ। আমি শুনেছি, তানিয়ার স্বামী আলামিন ১০ মিনিট দেরিতে বাড়িতে এসেছিলেন। এ নিয়ে মনোমালিন্য –কথা-কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে আত্মহত্যা করেছে তানিয়া।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতাম তানিয়া তার স্বামীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতেন। তানিয়া তার স্বামীর নাম্বারে ফোন করলে প্রথম চান্সেই কল রিসিভ না করলে তর্কবিতর্ক শুরু করতে দেখেছি আমরা। পরবর্তীতে তার স্বামী একাধিকবার কল করলেও তানিয়া ধরত না। সে অত্যন্ত জেদি টাইপের মেয়ে ছিল। এছাড়া তানিয়া যতক্ষণ বাড়িতে অবস্থান করতো ঠিক ততক্ষনই তার স্বামীকে কোথাও যেতে দিতেন না। এক কথায় সে তার স্বামীকে সন্দেহ করতেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি, তানিয়া তার আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আলামিনকে বিয়ে করেন। আর আলামিনেরও আগের পক্ষের স্ত্রী-সন্তান আছে। আগের পক্ষের স্ত্রীর কারণেই স্বামী আলামিনকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন এবং সন্দেহ করতেন তানিয়া। সে মনে করতো আগের স্ত্রীর সঙ্গের হয়তো তার যোগাযোগ কিংবা দেখা করতে যেতে পারে।
নিহত তানিয়া খাতুনের ভাই বেল্টু রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফ্যানের সঙ্গে যেভাবে দড়ি বাধা হয়েছে সেটা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। তাকে তার স্বামী মেরে ফেলেছে। তবে কি কারণে মেরেছে এটা এখনি বলতে পারছিনা। তানিয়াকে নির্যাতন করা হতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন কথা আমার বোন আমাদের আগে জানায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল বলেন, আমরা তানিয়া খাতুনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সে নিজেই আত্মহত্যা করেছে। কোন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে না আমার নিকট। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে এটা আত্মহত্যা কিনা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী বলেন, একজন নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে জেনেছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে এটা আত্মহত্যা কিনা। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফএইচ