সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেয় চিকিৎসকসহ নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে বেলা ১২টার পর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠকের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগের সেবা চালুর কথা জানান হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হন ডা. সজীব কাজী নামের এক চিকিৎসক। হামলার শিকার সজীব হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সিসিইউতে কর্মরত ছিলেন।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনরা সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে টেন-হেঁচড়ে মারতে মারতে চারতলা থেকে নিচে নামিয়েও মারধর করতে থাকে। এসময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
পরেই হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিতে জরুরি বিভাগসহ কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে চিকিৎসকরা কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের প্রায় আট শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ডেঙ্গু পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন খালেদ হোসেন আবরার জানান, চিকিৎসা বন্ধ থাকায় তারা চরম আতঙ্কিত সময় পার করছেন। নার্সরা কিছুটা সেবা দিলেও চিকিৎসক না আসায় তারা চিন্তিত।
আন্দোলনরত মেডিকেল অফিসাররা জানান, হাসপাতালে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেভাবে তাদের সহকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে, তাতে তার মৃত্যুও হতে পারত। তাই যতক্ষণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে, ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি পালন করবেন।
এছাড়াও কর্মবিরতিতে আছেন নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুভজিৎ রুদ্র নামের একজন জানান, তারা কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। রোগীর এমন পরিস্থিতিতে তাকে কার্যকর সেবা দেওয়ার জন্য স্বজনদের দরকার হয়। কিন্তু ওই সময় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন না। তবুও আমাদের চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এরপরেও চিকিৎসকের ওপর হামলা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তারা সেবা না দিলে সমস্যা তো হবেই। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে জরুরি সেবা তারা শুরু করেছেন। চিকিৎসাসেবা একটি মানবিক পেশা, মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। তাই তারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। যার প্রেক্ষিতে কাজে যোগ দিবেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাধীন প্রায় ৮শ রোগী বিপাকে পড়েছেন। অনেকে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। তবে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ থাকলেও সেবা চালু আছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।
দুপুর ২টার পর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় চিকিৎসাসেবা বন্ধ নিয়ে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দুইজন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
জরুরি সেবা চালুর কথা বলা হলেও চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকদের অবস্থান নেই, এমন বিষয়টি তার নজরে আনা হলে তিনি বলেন, সেবা শুরু হয়েছে, হয়ত চেয়ারে দেখা যাচ্ছে না।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হলেও, চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন কেনো এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, এই বিষয়টি তার জানা নেই।
অ