সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন মান্নান হোসেন। ঢাকায় টিউশনির পাশাপাশি চেষ্টায় ছিলেন চাকরির। থাকতেন ঢাকার মহম্মদপুর এলাকায়। সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকে, তাই কোটা বৈষম্যের দূর করার দাবি নিয়ে নেমেছিলেন রাজপথে।
কিন্তু সেই পথের মাঝেই তার ডান হাত ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দুই দিন আগে ৩ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা, এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখমের ঘটনায় এক হাত অচল হয়ে গেছে তার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করা মান্নান হোসেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চরমৌকুড়ি গ্রামের জোয়াদ আলীর ছেলে। বর্তমানে মান্নান নিজ গ্রামের বাড়িতে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। দরিদ্র পরিবারের বৃদ্ধ বাবার পক্ষে চিকিৎসার খরচ জোগান দিতে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার চাকরির বয়স শেষের দিকে হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
মান্নান হোসেন জানান, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে ছিলেন তিনি। লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য অনেকবার পরীক্ষাও দিয়েছেন। কিন্তু কোটার কাছে হেরে গেছে মেধা। তাই এসব বৈষম্য দূর করার জন্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তবে ৩ আগস্ট রাতে ঢাকার মহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হঠাৎ আওয়ামী লীগের একদল দুর্বৃত্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা মান্নানের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এসময় তার ডান হাত ও ঘাড়ের জয়েন্টের শিরা কেটে যায়।’
মান্নান হোসেন আরও বলেন, ‘স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় সহযোগিরা। হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হলে সেখানে আমার অপারেশন হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বর্তমানে কুষ্টিয়া নিউ সান ক্লিনিকে ডা. হোসেন ইমামের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু হাতের অবস্থা এখন পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। হাত ঠিক হতে এক বছর সময় লাগবে।
মান্নান হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসা করাতে এরইমধ্যে এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে ৪ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন হচ্ছে। একদিকে চিকিৎসার খরচ, আবার অন্যদিকে চাকরির বয়স শেষের পথে। এসব নিয়ে পরিবারের লোকজন হতাশায় ভুগছে।’
মান্নান হোসেনের মেজো ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা চার ভাই। তিন ভাই ও বাবা মিলে কৃষিকাজ করে ছোট ভাই মান্নানকে পড়ালেখা করিয়েছি। কিন্ত হঠাৎ সব কেমন যেন পাল্টে গেল। হঠাৎ ঢাকা থেকে ফোন আসে ছোট ভাই মামুন আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। খবর পেয়ে খুব কষ্ট করে ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। এখন তার হাত পুরো অচল হয়ে গেছে। চিকিৎসা চলছে, তবে তার খরচ অনেক। বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা চলাচ্ছি।’
বাবা জোয়াদ আলী বলেন, ‘চাকরিতে কোটা বাদ দিতে আন্দোলনে নেমেছিল ছেলে। ছেলের যে অবস্থা হয়েছিল ওর বেঁচে থাকারই কথা ছিল না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তিনি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে এখন ছেলের চাকরির বয়স শেষের দিকে। আমার ছেলেকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বৃদ্ধ মা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আন্দোলনে আমার ছেলেকে ওরা মেরেছে। হাত কুপিয়ে অচল করে ফেলেছে। আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য এতো টাকা কোথাই পাবো। সরকারের কাছে দাবি, তারা যেন আমার ছেলের পাশে এসে তাকে সুস্থ করতে সাহায্য করে।’
প্রতিবেশী আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘মান্নান অনেক মেধাবী। সে মানুষের বিপদে সব সময় পাশে দাঁড়ায়। তার পরিবার চিকিৎসার খরচ মেটাতে খুবই কষ্ট করছে। যাদের জন্য আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমরা চাই বর্তমান সরকার মান্নানের চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি তাকে যেন চাকরি পেতে সহযোগিতা করেন।’
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক রিহান হোসেন বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মান্নানের বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
আরএ