সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শেখ হাসিনার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা। তারা কোথায় আছেন জানেন না নেতাকর্মীরাও। কোটা আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়েই কুমিল্লা ছাড়েন সাবেক সংসদ সদস্য বাহার।
দলীয় সূত্র মতে, বাহাউদ্দীন বাহার চোখের অপারেশনের অজুহাতে গত ১৫ জুলাই ঢাকায় চলে যান। এরপর আর কুমিল্লায় ফেরেননি। রাজধানীর উত্তরার বাসভবন থেকেই আন্দোলন দমানোর নির্দেশ দেন নেতাকর্মীদের। তার সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি মেয়র সূচনা।
গেল ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দিন কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। সেদিন মহানগর থেকে শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে টমছমব্রিজ-কোটবাড়ি সড়কে অবস্থান নেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র সূচনা। এ সময় সড়কে সড়কে নিপীড়ন চালানো হয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের।
সবশেষ ৩ আগস্ট কুমিল্লা নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য বাহার ও তার মেয়ে মেয়র সূচনার কঠোর নির্দেশনায় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে বাধ্য হন তারা। তবে মেয়র সূচনাকে সেদিন কুমিল্লার রাজপথে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের দিনও মেয়র সূচনা কুমিল্লাতেই ছিলেন। তবে শেখ হাসিনার পতনের পরপরই মুন্সেফবাড়ি এলাকার তাদের বাসভবনটি পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পুড়িয়ে ফেলা হয় রামঘাটলার মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস এমনকি কুমিল্লা ক্লাবও। তবে কোথাও মেয়র সূচনাকে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্ট বিকেল ৫টার পর সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে ৩ থেকে ৪ জন নারীকে বসিয়ে রেখে রানীর দিঘির দিকে যেতে দেখা গেছে। জনতা তখন সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল। কিন্তু এই নারীরা কারা সেটা বুঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে- ওই নারীদের মধ্যে কুমিল্লার মেয়র সূচনাও আছেন। তবে তাকে আটক বা হেফাজতের বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি সেনাবাহিনী।
গেল ৯ মার্চ ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচন। সে নির্বাচনে জিতে চার বছরের জন্য কুমিল্লা নগরীর চাবি সূচনারই হয়, প্রথম নারী নগরকন্যা হিসেবেও করেন সূচনা। তবে নির্বাচনের মেয়েকে জেতাতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ‘বাহারি’কেরামতি দেখে নগরবাসী। ৯ মার্চ দিনভর সুকৌশলে ভোটের নাটাই নিজের হাতেই রাখেন বাহার। কেন্দ্র থেকে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, কেন্দ্রের সামনে কর্মী বাহিনীর জটলা, পথে পথে বাধা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি, ভীতি ছড়ানোসহ বাহারের নির্বাচনী প্রতাপের কাছে ‘অসহায় আত্মসমর্পণ’ করেন ডা. তাহসীন বাহার সূচনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশত্যাগ ও দেশবাসীর উদ্দেশে সেনাপ্রধানের দেওয়া বক্তব্য শুনেই কুমিল্লার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। একই সঙ্গে অবসান ঘটে কুমিল্লার বাহারের বাহারি রাজত্বেরও। এ সময় বিক্ষুব্ধদের অনেকেই বলেন, জালিম বাহারের হাত থেকে কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে।
কুমিল্লার অভিভাবক হিসেবে পরিচয় দেওয়া বাহার একটা সময় শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজের দলের বিরোধীদেরও রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা করে ফেলেন। স্থানীরা জানায়, গত কয়েক বছরে কুমিল্লাজুড়ে একক রাজত্ব চলেছে বাহাউদ্দীন বাহারের। কুমিল্লা সদরের এমপি হলেও পুরো জেলাতে যেন বাহারের কথাই ছিল শেষকথা। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ছিলেন বাহারের বলয়ে।
কে