সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত সদস্যের আমানতের কোটি টাকা নিয়ে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি এনজিও গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে উধাও হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শত শত সদস্যরা ওই রাতেই তাদের টাকা ফিরে পেতে বিক্ষোভ করেন।
ভুক্তভোগী সদস্য ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেন নামে একটি এনজিও আমতলী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম রেজা টিটুর বাড়িতে একটি অফিস ভাড়া নেন। এ এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ছালেহ তালুকদার পরে কার্যক্রম শুরু করেন।
আবু ছালেহ বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেন্ডামারা গ্রামের আবু বক্কর তালুকদারের ছেলে। সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনজন মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে উপজেলার হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর, পৌরসভা ও কুকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কয়েক শত সদস্য সংগ্রহ করে তাদের অধিক পরিমান ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় কোটি টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করেন।
সদস্যদেরকে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে আসতে বলেন। বিভিন্ন এলাকার সদস্যরা ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও অফিসের নির্বাহী পরিচালকসহ কর্মীদের কোন খোঁজ না পাওয়ায় সদস্যরা নির্বাহী পরিচালক আবু ছালেহ তালুকদার ও কর্মীদের ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পায়। পরে সদস্যদের সন্দেহ হয় এবং এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই রাতেই বিভিন্ন এলাকার শত শত সদস্য অফিসের সামনে এসে ভিড় করেন।
একপর্যায়ে যখন সদস্যরা বুঝতে পারেন এই এনজিওটি ভূয়া তখন শত শত সদস্যরা কান্নাকাটি শুরু করেন এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে অফিসের বাড়িওয়ালা সেলিম রেজা টিটু ও স্থানীয়দের সহায়তায় মাহফুজা বেগম নামে এক মাঠকর্মীকে তার আমতলী সদর ইউনিয়নের ছোটনীলগঞ্চ গ্রাম থেকে এবং নির্বাহী পরিচালক আবু ছালেহ তালুকদারের বাবা আবু বক্কর তালুকদারকে তালতলীর গেন্ডামারা গ্রাম থেকে ধরে এনে আটকে রাখে।
পরে তাদের দুজনকে নির্বাহী পরিচালক আবু ছালহেকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাহফুজা বেগম বলেন, আমি এক মাস আগে চাকরি পেয়েছি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অন্য কর্মীরা নির্বাহী পরিচালকের আত্মীয় এবং তারা পলাতক রয়েছে।
আবু ছালের বাবা আবু বক্কর তালুকদার বলেন, ছেলের সাথে সঙ্গে ১৫ বছর ধরে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
ঋণের আশায় টাকা জমা দেওয়া সদস্য কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা গ্রামের শাহ আলম মাস্টার বলেন, আমার শুকতারা পুরুষ সমিতে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৯৫ হাজার টাকা সঞ্চয় এনেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এখন মোগো কি উপায় হবে। আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাগা গ্রামের লায়লা বেগম বলেন, আমার কামিনী মহিলা সমিতে ৮ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৮০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এভাবে পৌরসভার কাঁঠালচাপা মহিলা সমিতি, নাচনা পাড়া গ্রামের নয়নতারা মহিলা সমিতি, ছোট নাচনাপাড়া গ্রামের গন্ধরাজ মহিলা সমিতি, দক্ষিণ আমতলীর পদ্মফুল মহিলা সমিতিসহ চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা, ঘটখালী, পাতাকাটা, চালিতাবুনিয়া, কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা, রায়বালা, আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, নাচনাপাড়া, ছোট নাচনাপাড়া, মহিষডাঙ্গা, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড, হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা, চিলাসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দুই শতাধিক সমিতি গঠন করে ৪-৫ শতাধিক সদস্য সংগ্রহ করে। তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের এই এনজিওটি।
প্রজাপতি ঋণদান সমবায় সমিতির লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক মো. সেলিম রেজা বলেন, অফিস ভাড়া নেওয়ার পর দেখতাম সবাই নিয়মিত অফিস করতেন এবং প্রতিদিন লোকজন আসা যাওয়া করতো। বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা বলে বিকেলে তারা পালিয়েছে।
অভিযুক্ত প্রজাতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ছালেহ তালুকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে শুনেছি তবে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমতলী থানাকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
জেবি