সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উজানের ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে এই এলাকার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দুপুরে পানি কমে তিস্তা বিপৎসীমার ১০ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বিকেলের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। এর ফলে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে।
তবে অবিরাম বৃষ্টিপাতে জেলার জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুং থাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে উজানে তিস্তার পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানায়, উজানের পরিস্থিতি জানার পর থেকেই গত বুধবার থেকেই প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিস্তার চর ও নিচু এলাকার মানুষকে দ্রুত গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য মাইকে প্রচারণা শুরু হয়।
যা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলো ও মসজিদের মাইক থেকেও বন্যার পূর্বাভাষ ও সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়।
গতরাত ও বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, নবাবগঞ্জ, কিশামত সদর, হরিপুরের চর চরিতাবাড়ি, মাদারী পাড়া, পাড়াসাদুয়া, কানিচরিতাবাড়ি, রাঘব কারেন্ট বাজার, কাপাসিয়ার বাদামের চর, কাজিয়ার চর, পোড়ার চর, কেরানীর চর, বাজার চর, মিন্টুর চরসহ চণ্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে। ফলে আকস্মিক বন্যায় জমির ফসল, গবাদি পশু ও বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষ।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের লাসেন মিয়া বলেন, কয়েক দফা অল্পস্থায়ী বন্যার পর কাল রাত থেকে পানি নতুন করে বাড়তে শুরু করায় চরাঞ্চলে ভাঙনও বেড়েছে। পানি ঢুকে পড়ায় সবজি ও ধানের জমি নিয়ে তাদের শঙ্কা বাড়ছে। এবার ফসলহানি ঘটলে তাদের দুর্দশার শেষ থাকবে না । জলাবদ্ধ জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসল রক্ষা পাবে।
বেলকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ মোবাইল ফোনে জানান, মাইকিং করার পর অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। তবে কেউ কেউ বাড়িতে থেকেই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। তাছাড়া বসতভিটা, আসবাব, ধানচাল, গবাদিপশু নিয়ে বারাবার সরে যেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এখন পানি কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে গেল।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই সুন্দরগঞ্জের তিস্তাবেষ্টিত ৭ ইউনিয়নবাসীর জন্য ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে শুরু করলেও প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে তা কমে ৬৯ সেন্টিমিটারে চলে আসে। ফলে তখন পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল । বিকেলে পানি আরও কমে বিপদসীমার নিচে নেমে আসে। এই ধারায় পানি কমতে থাকলে চর ও নিম্নাঞ্চলে ডুবে যাওয়া ফসলের ক্ষেত থেকেও পানি দ্রুত নেমে যাবে।
জেবি