সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
একজন তুলে ধরেন তাওহিদের গুরুত্ব, আরেকজন সুরে সুরে আহ্বান করেন প্রেমসাগরে ডুব দিতে। শরিয়ত ও মারফতের পক্ষে-বিপক্ষে জমে ওঠে যুক্তিতর্ক। আসতে থাকে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন। নারী-পুরুষের দুই পালাকারের ঘণ্টাব্যাপী বাহাসের পর চিন্তায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা রেখেও একসঙ্গে মিলেমিশে জীবনযাপনের তাগিদ দেয় উভয়পক্ষ। কারণ বৈচিত্র্যই সৃষ্টির জীবনের সৌন্দর্য।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে বসেছিল পালাগানের এ আসর। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য–সংস্কৃতি তুলে ধরতে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাব আমরা উন্নতির শিখরে এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালাগানের জমজমাট আসর হয়। গণজাগরণের শিল্প আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে সারা দেশেই এই পালাগান হচ্ছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। পালাগান পরিবেশন করেন ইউসুফ বয়াতি ও ডলি সরকারের দল। পালার নাম ছিল শরিয়ত-মারিফত। পালাগানের বাণী ও সুরে মোহিত হয় আগত দর্শক–শ্রোতা। যদিও এদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে দর্শকের উপস্থিতি ছিলো কম।
প্রথমে নানা বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে পৃথক দুটি দেশত্ববোধক গানের সুরে এই পালা শুরু করে দুদলই। ঢোল-সেতার, বাঁশি মনোমুগ্ধকর সুরে প্রথমেই মুগ্ধ করে তোলে দর্শকদের। পালাটি ছিল শরিয়ত ও মারফতের। এতে শরিয়তের পক্ষে আখ্যান নির্মাণ ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন বাউল ইউসুফ বয়াতি। তার বিপক্ষে মারিফতে ছিলেন বাউল ডলি সরকার। ওলি-আউলিয়া, গাউস-কুতুবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেন ইউসুফ বয়াতি। অনন্ত অসীম প্রেমময় স্রষ্টার বন্দনা করেন শুরুতে। ভূমিকা শেষ হলে ধীরে ধীরে মূল পর্বে প্রবেশ করেন এই মারফতের ফকির। শরিয়তের আলেমের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন—নামাজ পড়লে নামাজি, রোজা রাখলে রোজাদার, হজ করলে হাজি এবং জাকাত দিলে মানুষের পরিচয় হয় দাতা। কী করলে মানুষ তবে ‘মুসলমান’ হয়? পালাকার বাউল ডলি সরকার নিজের পর্বের শুরুতেই উত্তরটা দিয়ে দেন। তিনি বলেন, তাওহিদের পথে থেকে যে আত্মশুদ্ধি করে সেই মুসলমান। স্কুল-কলেজ থেকে নিয়ে চারপাশের সব কিছুতেই রয়েছে শরিয়তের উপস্থিতি। শরিয়তের বাইরের যা তা ইসলাম নয়। ইউসুফ বয়াতি বলেন, মারফতের সব তরিকার প্রধানরাও ছিলেন শরিয়ত মান্য করা হক্কানি আলেম। কাজেই মারফতের সব ভেদ রয়েছে শরিয়তের মাঝেই। এমনতর দার্শনিক জিজ্ঞাসা, উত্তর, প্রত্যুত্তরের ফাঁকে ফাঁকে দুই পালাকারই মূলত ইসলাম ধর্মের গুণগান গাইতে থাকেন। এর মাঝে আকর্ষণীয়ভাবে তারা উপস্থাপন করেন মহানবী (সা.)-এর জন্ম, বেড়ে ওঠা ও তার আদর্শ জীবনের গল্প। দুই পালাকারের সঙ্গে হারমোনিয়াম, দোতারা, বাঁশিসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সংগত দেয় দুটি পৃথক দল। তত্ত্ব ব্যাখ্যা, শ্লোক ও দীর্ঘ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই পালা।
জেবি