সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কাঠের ভারি হাতলের চাপে সরিষা ভেঙে একটি পাত্রে ফোটায় ফোটায় চুইয়ে পড়ছে খাঁটি সরিষার তেল। টিনসেড ঘরে ক্যাঁচ-ক্যাঁচ আর ঘর-ঘর-শব্দে ঘুরছে কাঠের তৈরি তেলের ঘানি। ঘানির ভেতরে ঢালা হয়েছে সরিষা দানা। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর বাজারের ধানহাটি এলাকায় এভাবেই আড়াই বছর ধরে ঘোড়ায় টানা ঘানি থেকে সরিষা থেকে তেল সংগ্রহ করছেন জিয়াউল বারী। ধরে রেখেছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আর এই তেলের ঘানি দিয়েই চলে জিয়াউল বারীর সংসারের চাকা। বারী উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
চারদিকে যখন অবিশ্বাস আর ভেজালে সয়লাব তখন চোখের সামনেই ঘরের দুয়ারে খাঁটি তেলের ঘানি। কালচে সোনালি রঙের প্রতিটি ফোঁটা তেলের সঙ্গে নিশ্চিত হয় বিশ্বাস। এই তেলে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। যারা এর সঠিক গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এখনো ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল ব্যবহার করেন।
স্থানীয় জনি আহমেদ ও বকুল বলেন, সড়কের পাশে খোলা জায়গায় ঘানিতে তেল ভাঙায় পথচারীরা উৎসাহ নিয়ে তেল ভাঙা দেখেন। পুষ্টিগুণেই নয় ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেলে যে কোনো ভর্তা থেকে শুরু করে প্রতিটি রান্নায় জুড়ি মেলা ভার। যেকোনো আচারে সরিষার তেলের বিকল্প নাই। রান্না ও শীতকালে গায়ে মাখার জন্যও এ সরিষার তেল ব্যবহার করি।
জিয়াউল বারী বলেন, তার ঘানিতে একবারে ১০-১২কেজি সরিষা ভাঙানো যায়। একদিনে পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিনবার সরিষা ভাঙানো যায়। মেশিনে সরিষা ভাঙানোর খরচ ও সময় কম লাগার কারণে মেশিনে সরিষা ভাঙাতে মানুষের ঝোঁক বেশি। তাছাড়া হাতের কাছে ঘানিও এখন তেমন মেলে না। তিনি আরও বলেন, অনেকে সরিষা ভাঙাতে আসলে তা চুক্তিতে ভেঙে দেন। প্রতিদিন এই ঘানি থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয় তার। ঘানির তেল বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলছে তার সংসার। ঘানির ঘোড়া ঘুরানোর সময় চোখ বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জিয়াউল বারী বলেন, ঘুরার সময় চোখ খোলা থাকলে ঘোর লাগে। এ ছাড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে ঘোড়া ঘুরতে চায় না।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, প্রযুক্তির দাপটে বিলুপ্তর পথে ঘানি শিল্প। ঘানি ভাঙা তেল শতভাগ খাঁটি হয়। কারণ এতে কোনো কেমিকেল মেশানো হয় না। এতে তেলের গুণগত মান ঠিক থাকে।
জেবি