সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসেছে হরেক রকমের পিঠার স্টল। সড়কের মাঝখানে উন্মুক্ত চলছে লোকগান আর নৃত্য। স্টলগুলোতে থরে থরে সাজানো কানমুচড়ী, ফুলঝড়ি, মুইঠা, পুলি, পাতা নকশীসহ হরেক রকমের পিঠা।
প্রকৃতি যে কতটা সুন্দর এবং কতো ধরনের সাজসজ্জায় নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারে তা কেবল নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা তালতলী আসলেই অনুধাবন করা সম্ভব। তাইতো এই প্রকৃতির সৌন্দর্য উদযাপন করার লক্ষ্যেই টানা তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তালপিঠা মেলা।
গত ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়ার এই তালপিঠা মেলা দিন দিন জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে এমনকি সারাদেশে নতুন এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে সৌখিন মানুষেদের মাঝে।
মূলত এই তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তখন তিনি ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বজ্রাঘাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি যোগ হবে বড়তি সৌন্দর্য।
কি নেই এই মেলায়? রয়েছে হরেক রকম তালের তৈরি পিঠে, তাল পাতার তৈরি বিভিন্ন রকমারি জিনিসপত্র। পিঠা প্রেমীদের জন্য রয়েছে তাল পিঠের বিভিন্ন স্টল।
নওগাঁ সাপাহার উপজেলা থেকে এসেছে মিনা পিঠাঘর নামের একটি স্টল। সেখানে রয়েছে প্রায় পঁচিশ পদের নানান বাহারি তাল পিঠে। এর মধ্যে রয়েছে রয়েছে তালমোহন, তাল বড়া, হৃদয়হরণ পিঠা, তালের তৈরি ফুল পিঠা, তালের তৈরি জিলাপীসহ আরও বেশ কয়েক রকমারি পিঠা।
মূলত গত ২১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পিঠে মেলা এবারও তালতলীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ শনিবার থেকে। চলবে আগামীকাল রোববারও।
গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মোরশেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি।
অবসরপ্রাপ্ত এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার বজলুর রশীদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা, নওগাঁ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশেদুল হক, জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস, এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, অফিসার ইন চার্জ মাইদুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ আবেদ হোসেন মিলন, হাজিনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
পিঠা মেলাটির আয়োজন করেছে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ। আয়োজকরা জানান, এবার বৈরি আবহাওয়া থাকার কারণে বেশি সংগঠন ও ব্যবসায়ী পিঠা উৎসবে অংশ নিতে পারেনি। তারপরেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কোনো কমতি নেই। উৎসবের আয়োজন যেমন ব্যাপক তেমনি পিঠার সম্ভারও ছিল বৈচিত্রময়। প্রায় ৩০ ধরনের তালপিঠা ছাড়াও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বানানো অর্ধশতাধিক রকমের পিঠা আসে উৎসবে। প্রতিটি পিঠার দাম ছিল ২০টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতিটি স্টলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ রকমের পিঠা দেখা যায়। বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা পিঠার পাশাপাশি অনেক স্টলে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরিও করা হয়।
পরিবার নিয়ে নওগাঁর সদর থেকে পিঠা উৎসব দেখতে আসেন সোভন রহমান। তিনি বলেন, সারিসারি তালগাছের সড়কে আসলে এমনিতেই হৃদয়ে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। সময় পেলেই মাঝে মাঝে পরিবার নিয়ে আমি এখানে আসি। আজকে আরও ভালো অনুভূতি হচ্ছে। এখানে একসঙ্গে অনেক রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। আমার আট বছরের ছেলে ও ছয় বছররের মেয়ে অনেক পিঠাই আগে চিনতো না। এখানে এসে অনেক ধরনের পিঠা দেখে ও তার স্বাদ নিতে পেরে অনেক খুশি। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকায় আরও ভালো লাগছে। এবারের মেলায় বাড়তি যোগ হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস এবং ত্রিসূল সাংস্কৃতি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেন, সৃষ্টিতে যে এতো আনন্দ। আমি আগে বুঝতে পারিনি। আমি আবেগে আপ্লুত। আমি নিজের চোখকে ধরে রাখতে পারছি না। চোখে পানি এসে গেছে। মানুষ কাঁদে এক দুঃখে, আর এক সুখে। আমার চোখে পানি এসে গেছে আজ সুখে। হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলি আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেসব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায়, তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় আসলে তালগাছগুলি দেখতে আসি। একটা অন্য রকম প্রাশান্তি অনুভূত হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কটি পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে স্থানীয় প্রশাসন তালপিঠা উৎসবের যে আয়োজন করেছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মানুষ একটা নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা অনেক ধরনেরর পিঠার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এ প্রজন্ম।
উৎসবের অন্যতম আয়োজক নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, এবারের উৎসবে যে পরিমান মানুষের সাড়া পেয়েছি তাতে আমি অভিভূত। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হরেক রকমের পিঠার সমাহার নিয়ে এখানে স্টল দিয়েছে।
জেবি