সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার চেষ্টার অভিযোগে প্রতারক স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে স্ত্রী মামলা করেছেন।
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তবে প্রতারক স্বামী পলাতক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ভাকুড়া গ্রামের মকসেদ আলীর ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ বিপ্লব। তার স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা ইএসডিওর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ঠাকুরগাঁও সদরের মুন্সিরহাট শাখায় চাকরি করেন এবং সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। প্রায় এক যুগ আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছর বয়সি একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
স্বামী বিপ্লব দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুর আদাবরে একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন এবং বিপ্লবের বাবা মকসেদ আলী আদাবরে একটি বাসাতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিপ্লব তার বাবাকে জানায় সে ঢাকা মিরপুর-১ এলাকার এক ব্যক্তির কাছে টাকা পাবে। পরে সন্ধ্যায় ফিরে না আসায় এবং বিপ্লবের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বাবা মকসেদ আলী ওই দিন রাতে আদাবর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাত ১টার দিকে বিপ্লবের মোবাইল ফোনের অবস্থান সিরাজগঞ্জ বলে জানা যায়। পর দিন বুধবার বিপ্লবের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন স্বামীকে খুঁজতে সিরাজগঞ্জ থানায় যান। সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ আবারও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপ্লবের অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ বিপ্লবকে খুঁজতে অভিযান শুরু করে।
এরই মধ্যে স্ত্রী ফারহানার মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে স্বামী বিপ্লবের চোখ ও হাতা-পা বাঁধা ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ বিপ্লবের মোবাইল ম্যাসেঞ্জার থেকে পাঠায়। পরে বিপ্লবের মোবাইল নম্বর থেকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে স্ত্রী ফারহানাকে মেসেজ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় থানা পুলিশ ও ফারহানার পরিবারের লোকজন বিপ্লবকে খুঁজতে থাকেন।
একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফারহানা লোকমুখে খবর পায়, তার স্বামী বিপ্লবকে পীরগঞ্জ পৌর শহরের শহিদ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সড়কের রিফাত ট্রেডার্স নামে একটি পুরাতন মোটরসাইকেল শোরুমে দেখা গেছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই পুরাতন মোটরসাইকেল শোরুমের সার্ভিসিং রুমে তল্লাশি চালিয়ে প্রতারক স্বামী বিপ্লবকে বাঁধা রশি, কাপড়ের টুকরো এবং একটি চেয়ার জব্দ করে।
এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই মোটরসাইকেল শোরুমের কর্মচারী মাসুম ও সুমনসহ মোটরসাইকেল শোরুমের মালিক পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজার ছেলে পুষ্পকে আটক। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে মূলত স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্যই ওই পুরাতন মোটরসাইকেল শোরুমের সার্ভিসিং কক্ষে প্রতারক স্বামী বিপ্লবের পরামর্শে এ ধরনের অপহরণ নাটক সাজানো হয়।
এ ঘটনায় স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন বাদী হয়ে স্বামী বিপ্লবসহ মোটরসাইকেল শোরুমের কর্মচারী মাসুম ও সুমন এবং ভাকুড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। তবে রাতেই পুলিশ মোটরসাইকেল শোরুম মালিকের ছেলে পুষ্পকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ জানান, আটক দুজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আটক মোটরসাইকেল শোরুম মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে বাদীর কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারী স্বামী বিপ্লবকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, বিপ্লব সম্প্রতি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে তার সহযোগীদের ডিবি পুলিশ সাজিয়ে উপজেলার খটশিংগা বাজারের বিভিন্ন দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে ভীতি সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
জেবি