সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সৎ বাবার (মায়ের দ্বিতীয় স্বামী) সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে কিশোরী আঁখি খাতুন (১৪)।
এরপর যশোর শহরে এসে দুই দফা সৎবাবা মিন্টু সরদারে ধর্ষণের শিকার হয় সে। ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখতে শ্বাসরোধে হত্যার পর চলন্ত ট্রেন থেকে আঁখিকে ফেলে দেয় মিন্টু। বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকজনকে বলে মেয়ে হারিয়ে গেছে।
একপর্যায়ে নিজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়। সোমবার সকালে যশোর সদরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশে আঁখি খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত মিন্টু সরদারকে গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে যশোর পুলিশ।
নিহত আঁখি খাতুন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ বিষয়ে মঙ্গলবার যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।
এদিকে, মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দীন জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহেশপুর থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দেয় আঁখির মা নূর জাহান। এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরের দিন যশোরে মরদেহ উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে আঁখির পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে যশোর সদরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ছিল। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই কিশোরীর ছবি দিযে পরিচয় শনাক্তের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। ফেসবুকে ছবি দেখে মহেশপুর থেকে এক ব্যক্তি নিহতকে শনাক্ত করতে পারেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কিশোরীর পরিচয় পাওয়ার পরে সন্দেহভাজন হিসাবে তার সৎ বাবা মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। মিন্টু সরদার জানিয়েছেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সৎ মেয়ে আঁখিকে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রভোলন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। মেলায় ঘুরাঘুরি শেষে রোববার যশোর শহরের রেলস্টেশন এলাকার বৈকালী হোটেলে একটি কক্ষে উঠেন। সেখানে আঁখির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে সৎপিতা মিন্টু। পরের দিন রাতে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার সময় রাতে যশোর রেলস্টেশনের ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফের ধর্ষণ করে। এদিন রাত ১১ টার দিকে সীমান্ত এক্সপেস যোগে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চলন্ত ট্রেনে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মিন্টু। এর পর তিনি বাড়িতে এসে তরুণীর দুই পায়ের একজোড়া নুপুর একটি সিগারেটের প্যাকেট ভর্তি করে তার বসতঘরের পাশে আবর্জনার মধ্যে পুতে রাখে। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের ইউপি মেম্বার আবদুল আজিজ বলেন, বাড়ির কাউকে না জানিয়ে আঁখিকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ে মিন্টু সরদার। এরপর লোকজন তাদের খুঁজে না পেয়ে আমার কাছে আসে। আমি তাদের থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দিই। আঁখির মা তার দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দেয়। একদিন পর মিন্টু সরদার একাই বাড়িতে ফিরে আসে। তখন পরিবারের লোকজনকে বলে মেয়ে হারিয়ে গেছে। মিন্টু নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পরিবারের লোকজন তাকে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, আঁখির মা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে মিন্টুর বিয়ে হওয়ার আগে সাতক্ষীরাতে বিয়ে হয়েছিলো। সেই দম্পতির সন্তান আঁখি। পরবর্তীতে সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে করেন নুরজাহান। এর আগে মিন্টুও দুই বিয়ে করেছিল। এর মধ্যে এক স্ত্রী মিন্টুকে ছেড়ে চলে যায়; অন্যটি মারা যায়। মিন্টু ও নুরজাহানের সংসারে একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। এই ঘটনায় আঁখির মা নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে খুলনা রেলওয়ে থানাতে মামলা করবেন। মিন্টু দিনমজুরের কাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-১ ডিএসবি) মামুন খান, জেলা ডিবি (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ডিবি পুলিশের এস আই মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
জেবি