সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফারহানের নিহত হওয়ার ঘটনা আন্দোলনে যোগ করে নতুন মাত্রা। ছেলের ১৮তম জন্মদিনে ফাইয়াজ–এর খালার একটি লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফাইয়াজের মৃত্যুর খবর অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করায় কোটা আন্দোলন চলাকালেই ফারহান ফাইয়াজ সবার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তারপর সময় যত গড়িয়েছে ততই ফারহান আন্দোলনকারীসহ মুক্তিকামী সকল মানুষের কাছে বীরের উপাধি পেতে থাকে। সেই ফারহানের গত ১২ সেপ্টেম্বর জন্মদিন ছিল। বেঁচে থাকলে ১৮ বছরে পা রাখত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফারহান ফাইয়াজ। তবে ফাইয়াজ না থাকলেও তার জন্মদিন পালন করেছেন তার বাবা-মা, বোন, খালাসহ বন্ধুরা।
ফাইয়াজের স্মৃতিচারণ করে চিঠিতে তার খালা লেখেন, প্রিয় ফাইয়াজ, আব্বা আমার- আমার কলিজা বাচ্চা, আমার চাঁদের টুকরা। কেমন আছো আব্বা? পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে আজকে তোমার জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। কত কত স্মৃতি আমাদের। আব্বা আমি জানি তুমি খুব ভালো আছো। আমি তোমার জন্য কান্না করলেই মাহা আমাকে বলে ‘মা, ভাইয়া তো শহীদ, ভাইয়া কত ভালো আছে! তুমি কাঁদো কেন?’
তিনি লেখেন, জানো বাবা, সেদিন বাজার করতে গিয়ে যেই চকোলেট এর শেল্ফ এর সামনে দিয়ে যাচ্ছি- আমি দেখতে পেলাম ঠিক তুমি দাঁড়িয়ে, আর ক্যাডবেরির একটা বড় সিল্ক এর প্যাকেট আমাকে দেখিয়ে বলছো মুনাম্মা নেই এটা? বাবা আমি আর চকোলেট কিনিনা, মাহা মাইরীন ও আর আবদার করে না।
তিনি আরও লেখেন, সেইদিন মাইরীন মাহাকে বলছে ‘জানো মাহা-মা আর কখনও বিরিয়ানি রাঁধবে না। ভাইয়া যে নাই, তাই।’ সত্যিই তো বাবা, আমি কী করে রান্না করবো বলো? তোমাকেই তো খাওয়াতে পারবো না!
শহীদ ফাইয়াজের খালা লেখেন, আব্বা, আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না? আমি যে কেমন আছি জানি না বাবা- শুধু আমার কিছু ভালো লাগে না। শুধু মনে হয় অনেক দূরে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে যেতে পারতাম- যেখানে কেউ নাই! চুপচাপ।
ফাইয়াজের স্কুলের রাস্তা স্মরণ করে তিনি লেখেন, আমি যখন স্কুলে যাই বা অন্য কাজে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ক্রস করতে হয়, জানো বাবা আমি পুরোটা রাস্তা চোখ বন্ধ করে থাকি। সিটি হসপিটালের সামনে দিয়ে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাখি। মনে হয় কেন আমাকে এসব পথে চলতে হচ্ছে। ধানমণ্ডি ২৭টা এখন সবচেয়ে বিভীষিকাময় আমার জন্যে।
তিনি লেখেন, আচ্ছা বাবা এই যে তোমার জন্মদিন, রোজার ঈদ, কুরবানির ঈদ, পহেলা বৈশাখ আসবে, আমি কী করবো বলো তো? আমাদের না একসাথে শপিং এ যাওয়ার কথা! তারপর শপিং শেষে পিৎজা আর কফি খেয়ে রিকশা চড়ে গল্প করতে করতে বাসায় ফেরার কথা!
তিনি আরও লেখেন, আমি সারাটা দিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি, তুমি যে কত কত উপদেশ দাও আমাকে! কত বড় হয়ে গেছো তুমি আব্বা!
ফাইয়াজের খালা লেখেন, জানো বাবা তোমার জন্য যখন দোয়া করি, তখন আমি একটু স্বার্থপর হয়ে যাই। আমি আল্লাহকে বলি, আল্লাহ ফাইয়াজ কি বুঝতে পারছে, ওর জন্য আমি কত কষ্টে আছি? ওকে প্লিজ একটু বলে দিয়েন যে তোমার মুনাম্মা ভালো নাই। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তোমার মুনাম্মার জন্য কঠিন শাস্তি হয়ে যাচ্ছে। আবার মনে হয়, এটা শুনলে হয়তো তোমার মন খারাপ হবে! তখন আবার কথা বদলে ফেলি। শুধু চাই তুমি ভালো থাকো।
তুমি ইনশাল্লাহ অনেক অনেক ভালো আছো। কারণ, যত মানুষ তোমার জন্য কেঁদেছে আর যত লোক তোমার জন্য দোয়া করছে- তুমি নিশ্চয়ই জানতে পারছো। মাতৃভূমির ক্রান্তিলগ্নে যেই ছেলে বীরের মত প্রাণ দেয়, তাকে কেউ ভালো না বেসে পারে বাবা? সমস্ত পৃথিবী তোমাকে এখন চেনে, আব্বা। অনেক ভালোবাসি বাবা, অনেক দোয়া রইল। শুভ জন্মদিন বাবা। তোমার মুনাম্মা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
আরএ