সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে”। (সূরা: আর্-রূম, আয়াত: ২১)
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে স্বামীকে উত্তম স্বামী হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। (তিরমিজি ৩৮৯৫)
উত্তম স্বামী হওয়ার ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যেসব গুণাবলি ছিল তা হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো:
নিজের কাজ স্ত্রীর উপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজের কাজ নিজে করা উত্তম স্বামীর গুণাবলি। এক লোক আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলো, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কি কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বলেন,
হ্যাঁ, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ ২৪৭৪৯)
বাহির থেকে এসে স্ত্রীর কাজ দেখে খোটা না দিয়ে তাকে সহযোগিতা করলে পরস্পর ভালোবাসা বাড়বে। কেননা নবীজি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন?
তিনি বললেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজে যেতেন’। (বুখারি ৬০৩৯)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সঙ্গে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সঙ্গে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন এবং ভালোবাসা ও বদান্যতার সঙ্গে আচরণ করতেন।
ইবনে সাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত হজরত আয়েশা (রা.)- কে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে একান্তে অবস্থানকালীন সময়ের স্বভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে কোমল ব্যক্তি, সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল, তিনি কখনো তার সঙ্গীদের সামনে পা প্রসারিত করে বসতেন না।’ (তিরমিজি)
স্ত্রীকে অবজ্ঞা না করে তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া সুন্নত। কোনো কাজে তার পরামর্শ নেওয়াও সুন্নত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় যখন সবাইকে মাথা মুণ্ডন ও পশু জবাই করতে বললেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম কেউ তা করতে উঠছিলেন না। তখন তিনি এ ব্যাপারে স্ত্রী উম্মে সালামাহ (রা.)-এর কাছে পরামর্শ চাইলেন।
উম্মে সালামাহ (রা.) বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি জবাই করুন এবং নাপিত ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন।
সে অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের পশু জবাই করলেন এবং নাপিত ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেখে সাহাবিগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কোরবানি দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।’ আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, ‘তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের রবের কসম!’ এ কথা শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, ইয়া রসুলাল্লাহ, সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (বুখারি ৫২২৮)
এ থেকে বোঝা যায় তিনি স্ত্রীদের পর্যবেক্ষণ করতেন এবং কখনো তাদের রাগের ওপর পালটা প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। আমার মুখ লাগানো স্থানে তিনি তার মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের টুকরা চুষে তা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ লাগাতেন। (মুসলিম ৩০০)
এছাড়া রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা সফরে গেলে স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তাদের সাথে প্রেমময় সম্পর্ক তৈরি করতেন। ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখতেন না। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন।
আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণ করার উপদেশ গ্রহণ কর। (বুখারি ৩৩১, মুসলিম ১৪৬৮)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি খাদিজা (রা.) ছাড়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পত্নীদের আর কাউকে ঈর্ষা করিনি, যদিও আমি তাকে পাইনি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরি জবাই করতেন তখন বলতেন, এর মাংস খাদিজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাকে রাগান্বিত করলাম, আর বললাম, খাদিজাকে এতই ভালোবাসেন? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে’। (মুসলিম ২৪৩৫)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদেরকে খুব ভালোবাসতেন। বুখারি ও মুসলিমে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি নামাজ শুরু করে লম্বা করতে চাই, তবে শিশুর কান্না শুনে হালকা করে শেষ করি, কারণ আমি মায়ের কষ্টের তীব্রতা জানি।’
পর্দা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ এবং তার রসুল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা। কেননা তাদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর ওপর ফরজ করা হয়েছে। তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীকে পর্দায় রাখা।
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে’। (সুরা আহযাব ৩৩)
এস