সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অনেক সময় আমরা নিজের বর্তমান দুর্দশা নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু কখনো ধৈর্যের সঙ্গে চিন্তা করে দেখি না, যে আমরা দুনিয়ায় আসার সময় প্রত্যেকেই সবার রিজিক নিয়ে এসেছি। আল্লাহর দরবার থেকে আমাদের সবার জন্য রিজিক বরাদ্দ করা হয়েছে।
মূলত পৃথিবীতে থাকা প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য আল্লাহ তাআলার বিশেষ দানকে রিজিক বলা হয়। যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করা হয়। আর রিজিক সেটাই। যা বান্দার উপকারে আসে। তবে অনেকে মনে করেন রিজিক নির্ধারিত হলে চেষ্টার কি প্রয়োজন আছে।
এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহর।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬)
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর নির্ধারিত রিজিক রয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা এ রিজিক অন্বেষণে বেড়িয়ে যেতে বলেছেন।
হযরত হুসাইন বিন আলী (রা.)-এর বিখ্যাত একটি উক্তি আছে, ‘রিজিক নির্ধারিত। লোভীরা বঞ্চিত। কৃপণ নিন্দিত ও হিংসুক পীড়িত।’ (তাফসিরে রুহুল বয়ান, আল্লামা আবুল ফিদা ইসমাঈল হাক্কি (র.), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯৭) এটাকে অন্বেষণ করে নিতে হবে। আল্লাহর থেকে চেয়ে নিতে হবে।
রিজিকের পরিচয়
রিজিক শব্দটি আরবি। আল্লামা ইবনে ফারিস (র.) তার অভিধানে লিখেছেন, ‘সময় অনুযায়ী আসা দানকে রিজিক বলা হয়। এ ছাড়া রিজিক শব্দটি শুধু দান অর্থেও ব্যবহৃত হয়। রিজিক মানে হলো সময় অনুযায়ী প্রদান করা আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান। (মাকায়িসুল লোগাহ, পৃষ্ঠা ৩৩৩)
আল্লামা ইবনে মানজুর (র.) লিখেছেন, ‘রিজিক দুই প্রকার: ১. দেহের জন্য রিজিক হলো খাদ্য। ২. অন্তর ও আত্মার জন্য রিজিক হলো জ্ঞান।’ (লিসানুল আরব, ইবনে মানযুর, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৩৯)
আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহের নাম রিজিক, যা তিনি মানুষসহ সব প্রাণীকে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন।
আল্লাহই রিজিকদাতা
আল্লাহ–তাআলাই একমাত্র রিজিকদাতা। রিজিকের জিম্মাদারি একমাত্র তার। তিনি ছাড়া আর কোনো রিজিকদাতা ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রিজিকদাতা। শক্তির আধার ও পরাক্রমশালী।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত:৫৮)
আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করেছেন,
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহর। (সুরা হুদ, আয়াত: ৬)
প্রত্যেক মানুষের রিজিক নির্ধারিত। একজন মানুষ যা কিছু পান বা লাভ করেন, পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে তিনি তা পেয়ে থাকেন। যা কিছু মানুষ পান না বা লাভ করেন না, নির্ধারিত ছিল না বলেই তিনি তা পাননি বা লাভ করেননি। নির্ধারিত রিজিকে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কেউ এক মুঠো বেশি রিজিক পাবেন না, এক মুঠো কমও পাবেন না। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের পৃথিবীতে ঠাঁই দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১০)
রিজিক আল্লাহ–তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তার তালাশ করা বা অনুসন্ধান করা বান্দার দায়িত্ব। রিজিক আল্লাহ–তাআলার হাতে, চেষ্টা বান্দার হাতে। আল্লাহ–তাআলা রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন বলে তার মানে এই নয়, সে রিজিক আপনা–আপনি আমাদের কাছে এসে হাজির হবে।
সুখ ও বরকতময় জীবন লাভের পাথেয় ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি। তিনি নিজে আমল করেছেন। উম্মতকেও আমল করতে বলেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত ফজরের নামাজের পরপরই আল্লাহর কাছে হালাল রিজিক কামনা করতেন।
এমন জ্ঞান কামনা করতেন, যাতে মানুষের উপকার হয়। আর নিজের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্যও প্রার্থনা করতেন। এটি মূলত উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো একটি দোয়া ও নসিহত।
হাদিসে এসেছে-
হযরত উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে বলতেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ ওয়া রিযকান তায়্যিবা ওয়া আমালান মুতাকাব্বিলা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান প্রার্থনা করছি, উত্তম-পবিত্র রিজিক কামনা করছি এবং কবুল হওয়ার মতো কর্ম তৎপরতা কামনা করছি। ’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
আকাশ থেকে রিজিক নাজিল হবে, আর বান্দা কেবল তা গ্রহণ করে ধন্য হবে। আল্লাহ–তাআলার ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী রিজিক অনুসন্ধান করতে হবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা জুমআ, আয়াত: ১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র বর্ণনায় আছে যে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা দ্বীনের ফরজগুলোর পর অন্যতম ফরজ।’ (সুনানুল কুবরা, বাইহাকি, খণ্ড ৬, হাদিস: ১১,৬৯৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,
হে মানুষ! আল্লাহ–তাআলাকে ভয় করো এবং উত্তম ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় রিজিক অনুসন্ধান করো। কারণ, কোনো প্রাণী তার জন্য বরাদ্দকৃত রিজিক প্রাপ্ত না হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও রিজিক লাভ করাটা তার জন্য বিলম্বিত হয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় রিজিক তালাশ করো। যা হালাল, তা গ্রহণ করো; যা হারাম, তা পরিত্যাগ করো। (ইবনে মাজাহ ২১৪৪)
এস