সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামাজ ও যাকাতের পরই রোজার স্থান। এর আরবি শব্দ সওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। পরিভাষায় সওম বলা হয়-প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজাভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।
সুতরাং রমজান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর ওপর পূর্ণ রমজান রোজা রাখা ফরজ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। সূরা বাকারা (২): ১৮৩
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। সূরা বাকারা (২): ১৮৫
একজন মানুষের জন্য এর থেকে সৌভাগ্যের আর কিছু নেই যে, সারা জাহানের মালিক, সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রাহমানির রাহিম সন্তুষ্ট হয়ে নিজেই তাকে প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এ থেকেই রোজার মর্যাদা অনুমান করা যায়।
রোজাদারের জন্য একাধিক হাদিসে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসূল সা. জান্নাতের নেয়ামত সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য এমন বস্তু তৈরি করে রেখেছেন যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শুনেনি এবং কোনো অন্তর যা কখনো চিন্তাও করেনি। (মুসলিম শরিফ: ৬৮৭২)
রোজাদারের জন্য হাদিসে একাধিক পুরস্কারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে তার বিবরণ দেওয়া হলো—
মহান আল্লাহ রমজান মাসে মুমিনের পাপ মার্জনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যায়, যদি সে কবিরা গুনাহয় লিপ্ত না হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৮)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস, ৭৬৬, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৮)।
জান্নাতে রোজাদারের জন্য আলাদা একটি দরজা থাকবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজাদারের জন্য জান্নতে রাইয়ান নামক একটি দরজা থাকবে। যে দরজা দিয়ে শুধু রোজা পালনকারী ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে। তাদের প্রবেশ শেষে সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬)।
রোজাদার শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে নিরাপদ থাকে। ফলে সে পাপাচারে লিপ্ত হয় না ও নিজেকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজা (সব ধরনের অশ্লীল ও মন্দ কাজের) ঢালস্বরূপ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)।
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বারের সুগন্ধের চেয়েও অধিক পছন্দের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, রোজা পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধি থেকে বেশি পছন্দনীয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২২১৩)।
রোজা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। আল্লাহ নিজে এর পুরষ্কার দিবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বনি আদমের সকল ইবাদত তাদের নিজের জন্য, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯২৭)।
কিয়ামতের দিন রোজা নিজে রোজা পালনকারীর জন্য সুপারিশ করবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।
রোজা বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে পানাহার, যৌনকর্ম ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৬২৬)।
রোজার কারণে রোজাদারের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০১)
এস