সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
প্রতিটি মানুষেরই রাগ থাকে। রাগ স্বাভাবিক অনুভূতি। তবে অনেক সময়েই এর প্রকাশ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকের আবার অল্পেই রাগ হয়। তবে অতিরিক্ত রাগ মোটেও ভালো নয়। এর ফলে নিজের কিংবা অন্যের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরণের মানুষকে সবাই একটু এড়িয়েই চলতে চায়। কিন্তু রাগও যে একটি আবেগ, তা আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভুলে যাই। অন্যসব আবেগের মতো এটি নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কষ্টকর। তাই কখনো কখনো রাগ প্রকাশ হয়ে গেলেই যে তা খারাপ, এমনটা মনে করার কারণ নেই।
তবে, হ্যাঁ রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। হঠাৎ করে রাগের মাথায় কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না। সময় নিন, প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন। অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন। আপনি যখন শান্ত হয়ে যাবেন, আপনার রাগের কারণগুলো তার সামনে তুলে ধরুন, ততক্ষণে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, সে ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবে।
কিন্তু এই রাগ আপনার শরীরের জন্য কতোটা ভালো বা ক্ষতিকর তা কি জানেন? না জানলে কোনো সমস্যা নেই। এই প্রতিবেদনে সেটা জানিয়ে দিচ্ছি।
অনেক সময় আমরা অনেককিছু সহ্য করে নিই। তখন নিজের ভেতরেই নিজের সঙ্গে লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু আমরা বাইরে তা প্রকাশ করতে পারি না। এতে আমাদের মন ধীরে ধীরে বিমর্ষ হয়ে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে শরীরেও। এর পরিবর্তে মাঝেমধ্যে রাগ প্রকাশ করাই ভালো। এতে সহ্যের সীমা পার হতে হবে না। আমাদের শরীর ও মন কষ্টও পাবে না।
ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়, যে রাগ এবং অন্যান্য নেতিবাচক আবেগগুলো খারাপ। যা অন্যের কাছে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়। কিন্তু অন্যান্য নেতিবাচক আবেগের মতো রাগ ক্ষতিকর নয়। বরং এটি পুষে রাখাই ক্ষতিকর। রাগ হলে তা প্রকাশ করাই উত্তম। কারণ, এটি একটি স্বাস্থ্যকর আবেগ।
রাগ করলেই যে ভীষণ ঝগড়া কিংবা মুখ দেখাদেখি বন্ধ করতে হবে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। বরং রাগ মানে হলো যে বিষয়টি আপনার পছন্দ নয় তা বুঝিয়ে দেওয়া। সেটি ভদ্রভাবেই করা যেতে পারে। এমনটাই স্বাস্থ্যকর। রাগ চেপে রাখলে সেখান থেকে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রাগ হলে তা ভদ্রভাবে প্রকাশ করুন।
রাগ যেভাবে সম্পর্কে প্রভাব ফেলে
রাগকে আর দশটা সাধারণ আবেগের সঙ্গে মেলানো যাবে না। কারণ, রাগ শুধু সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না; বরং রাগ থেকে মানুষ খুন করার মতো ঘটনাও ঘটে। কাজেই রাগের সময় মাথা ঠিক রাখতে না পারাটা কোনোভাবেই মন ভালো হওয়ার লক্ষণ নয়; বরং এটা আপনাকে সঙ্গীর কাছে অনিরাপদ করে তোলে।
একটা সম্পর্কের প্রাণ হলো যোগাযোগ। রাগের মাথায় খারাপ আচরণ করার মানেই হলো, এই যোগাযোগের রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া। ফলাফল? সম্পর্কে সমস্যার শুরু। এতে যোগাযোগ আরও কমতে থাকে। সেই সঙ্গে রাগের মাথায় বারবার খারাপ আচরণ করতে থাকার ফলে একটা সম্পর্কে বিশ্বাসেরও ঘাটতি শুরু হয়। যে মানুষ মুহূর্তের রাগে অন্য মানুষ হয়ে যেতে পারে, যা–তা আচরণ করতে পারে, তাকে কীভাবে যথেষ্ট বিশ্বাস বা ভরসা করা সম্ভব?
অবিশ্বাসের শুরু যে রাগ থেকে হয়, সেই অবিশ্বাস শেষ হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে। বেশির ভাগ শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার পেছনের কারণ হলো রাগ। অথচ একজন ভালো মনের মানুষের পক্ষে কি কাউকে নির্যাতন করা সম্ভব? তাহলে রাগী মানুষের মন কীভাবে ভালো হয়?
রাগ কমাবেন যেভাবে:
প্রথমেই রাগের ‘জাস্টিফিকেশন’ বন্ধ করুন। রাগকে বংশগত রোগ বা সমাধানের অযোগ্য কিছু ভাবা বন্ধ করে ছোট ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন-
১. সব সময়ই হাতের কাছে একটা ডায়েরি রাখুন। ডায়েরিতে নিজের সব রাগ লিখে ফেলুন। মানুষের বদলে বরং আপনার রাগ ডায়েরির ওপর দিয়েই যাক।
২. মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শিখুন।
৩. রাগের মাথায় যদি হিংস্র হয়ে ওঠার কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তবে অবশ্যই আপনার উচিত কোনো মনোবিদের সাহায্য নেওয়া। লজ্জা নয়, বরং সচেতনতাই আপনাকে এই রাগের অসুস্থ চক্র থেকে বাঁচাতে পারে।
৪. ব্যায়াম ও শারীরিক অনুশীলনও রাগ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক। খুব রাগ হলে বা খারাপ লাগলে ট্রাউজার আর জুতা পরে বের হয়ে দৌড় শুরু করুন বা কাছাকাছি কোনো জিমে যান। এতে একদিকে যেমন আপনার শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝরে যাবে, তেমনি ঝরে যাবে মনে জমে থাকা রাগের পাহাড়ও।
মানুষমাত্রই রাগ থাকবে, আবেগ থাকবে, ভালো লাগা থাকবে, খারাপ লাগাও থাকবে। তবে সেই আবেগের প্রকাশটা হওয়া চাই সুস্থভাবে। আপনার আবেগের প্রকাশ যদি অন্য লোকজনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেই আবেগের প্রকাশে সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রাগের মতো খুব ভয়ংকর একটা আবেগকে কোনোভাবেই মন ভালোর দোহাই দিয়ে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না!