সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
চলতি বছর দারুণ ব্যস্ত সময় পার করতে যাচ্ছে চীনের থিয়েনকং মহাকাশ স্টেশন। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য এক হাজারেরও বেশি গবেষণার পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে চায়না ম্যানড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস। এ ছাড়া মহাকাশ স্টেশনে সম্পন্ন হওয়া গবেষণাগুলো নিয়ে বিশদ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী মহাকাশ স্টেশনটিকে ঘিরে চীন মূলত চারটি মূল ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম চালাবে। এ তালিকায় আছে মহাকাশে মানুষের শারীরবৃত্তীয় গবেষণা, মাইক্রোগ্র্যাভিটি পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও আর্থ সায়েন্স। এ ছাড়া মহাকাশে নতুন প্রযুক্তিসহ মোট ৩২টি বিষয়ে চলবে নানা পরীক্ষা।
প্রতিবেদনে জানা গেল গত বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থিয়েনকং স্টেশনে মোট ১৮১টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে।
চায়না একাডেমি অব সায়েন্স-এর মহাকাশ সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিভাগের গবেষক চাং ওয়েই জানালেন, ‘মহাকাশে আমরা উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব এবং কোষের ওপর প্রচুর গবেষণা করেছি। অঙ্কুরোদগম থেকে প্রজনন পর্যন্ত ধানের প্রথম জীবনচক্রের গবেষণা সম্পন্ন করেছি এবং ফিরিয়ে আনা নমুনাগুলো পৃথিবীর জমিতে রোপণও করা হয়েছে। আমরা মহাকাশে জেব্রাফিশ ও হর্নওয়ার্টের সমন্বয়ে একটি বাইনারি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছি। মেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়ে ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য একটি ভালো ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। মহাকাশে হাড় ও পেশীর ক্ষয় সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। কিছু সংকর ধাতু পৃথিবীতে গলানো কঠিন, মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিস্থিতিতে সেটা নিয়েও গবেষণা হয়েছে। বিমানের ইঞ্জিন ব্লেডের উপকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাতু নিয়ে কাজ করেছি।’
এর মাঝে আবার মহাকাশ স্টেশনের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ‘ব্রাজিল নাট এফেক্ট’ নামের একটি পরীক্ষাও চালিয়েছেন চীনা নভোচারীরা। পৃথিবীতে নানা আকারের কণার মিশ্রণ নাড়াচাড়া করলে দেখা যায় বড় কণাগুলো উপরে উঠে আসে এবং ছোট কণাগুলো নিচে থেকে যায়। কিন্তু কম মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে দেখা গেল এর উল্টোটা ঘটছে।
চায়না একাডেমি অব সায়েন্সেসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষক হুয়ো মেইয়িং জানালেন, ‘আমরা আবিষ্কার করেছি, এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যাকর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে আমরা ব্রাজিল নাট এফেক্ট দেখি, যেখানে বড় কণাগুলো উপরে উঠে আসে। কিন্তু কম- মাধ্যাকর্ষণে আমরা দেখলাম বড় কণাগুলো নিচে থেকে যায়। অর্থাৎ কণার মিশ্রণের এই আচরণ স্পষ্টতই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ওপর নির্ভরশীল।’
২০২২ সালের নভেম্বরে থিয়েনচৌ-৫ কার্গো মহাকাশযানে করে চীনা মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়েছিল দানাদার সরঞ্জামের একটি সেট।
পরে এই সরঞ্জামগুলো স্থাপন করা হয় ওয়েনথিয়েন নামের একটি মডিউলের পরিবর্তনশীল মাধ্যাকর্ষণ ক্যাবিনেটে। এতে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে দানাদার মিশ্রণের কম্পন এবং পৃথকীকরণ নিয়ে গবেষণা করা হয়। মহাকাশ স্টেশনে এ গবেষণার সঙ্গে চাঁদ নিয়ে চীনের গবেষণার সম্পর্কও আছে।
চাং ওয়েই আরও জানালেন, ‘গবেষণাটি চাঁদের ধুলো ও মাটির মতো দানাদার পদার্থ নিয়ে গবেষণার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করেছে। চাঁদে বা মঙ্গলে ঘাঁটি স্থাপনের সময় এই গবেষণার ফলাফলও কাজে আসবে।’
মেরুদণ্ডী প্রাণীর পেশী ও কঙ্কালের বিকাশে মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে এই বছর ছয়টি জেব্রাফিশ চীনের মহাকাশ স্টেশনে যাবে। ভবিষ্যতে ভিনগ্রহে জীবনযাত্রাকে সহজ করার কৌশল বের করাই হবে এ গবেষণার উদ্দেশ্য।
চায়না একাডেমি অব সায়েন্স জানাল, থিয়েনকং মহাকাশ স্টেশনের একটি বিশেষ একুরিয়ামে রাখা হবে জেব্রাফিশ এবং ছয় গ্রাম সেরাটোফাইলাম নামের শৈবাল। জেব্রাফিশের হাড় এবং পেশীতে থাকা আমিষের ওপর শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব দেখা হবে এ গবেষণায়।
এদিকে মহাকাশে টিকে থাকা নিয়েও চলছে চীনা নভোচারীরা নানা গবেষণা। শেনচৌ-১৯ এর নভোচারীরা কাজ করছেন কৃত্রিম আলোকসংশ্লেষণ প্রযুক্তি নিয়ে। যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন ও জ্বালানি তৈরি করে, সেভাবেই বিশেষ যন্ত্রে সালোকসংশ্লেষণ বিক্রিয়া ঘটাচ্ছেন চীনা গবেষকরা। ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানে দারুণ কাজে লাগবে এটি।
এ কাজে নভোচারীরা মহাকাশ স্টেশনের ফ্লুইড ফিজিক্স এক্সপেরিমেন্ট ক্যাবিনেটে নমুনা প্রতিস্থাপন করেছেন এবং পৃথিবীতে নমুনা ফিরিয়ে আনার জন্য সংরক্ষণ করেছেন।
মহাকাশে জরুরি পরিস্থিতি, যেমন আগুন লাগলে বা স্বাস্থ্যগত কোনো জরুরি অবস্থার তৈরি হলে কীভাবে সমাধান করবেন তা নিয়েও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নভোচারীরা। সরঞ্জাম পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে, ক্রুরা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুসারে স্থান প্রয়োগের জন্য তরল লুপ সিস্টেমের সঞ্চালন পাম্পগুলি প্রতিস্থাপন করেছিল।
ফ্লুইড লুপ সিস্টেম নামের একটি বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার চক্রাকার পাম্পগুলোও বদলে দিয়েছেন নভোচারীরা।
চীনের থিয়েনকং মহাকাশ স্টেশন ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সব মাইলফলক স্থাপন করেছে। মহাকাশ স্টেশনটির গবেষণা কার্যক্রম শুধু মহাকাশে মানবজীবন সহজতর করতে নয়, বরং পৃথিবীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নতুন দিকও উন্মোচন করছে।
সূত্র: সিএমজি