সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) একটি বিতর্কিত বিজ্ঞাপন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞাপনটিতে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের দিকে একটি পিআইএ বিমানের অবস্থান দেখানো হয়েছে যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিজ্ঞাপনটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সিনেট অধিবেশনে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এই নির্দেশনার কথা জানান। একই অধিবেশনে পিআইএ-এর বেসরকারীকরণ নিয়েও আলোচনা হয়।
চার বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর ১০ জানুয়ারি ইসলামাবাদ ও প্যারিসের মধ্যে পিআইএ-এর ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়। কিন্তু প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের দিকে বিমানটির অবস্থান দেখানো বিজ্ঞাপনটি সময়োপযোগী না হওয়ায় এবং অসংবেদনশীলতার জন্য সমালোচিত হয়। ১৯৭৯ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের ওপর পিআইএ-এর একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানের ছায়া দেখানো একটি বিখ্যাত পিআইএ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এর তুলনা করা হয়।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সিনেটর শেরি রেহমান প্যারিস ফ্লাইটের বিজ্ঞাপনটির সমালোচনা করে বলেন, এটি জনসাধারণের উপহাসের কারণ হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি তৈরির জন্য দায়ী সংস্থা এবং এটি অনুমোদনকারী কর্মকর্তার নাম জানতে চান তিনি। পিআইএ-এর বেসরকারীকরণ পরিকল্পনা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিআইএ-এর ৩৪টি বিমানের মধ্যে মাত্র ১৯টি বর্তমানে চালু আছে, বাকি বিমানগুলো গ্রাউন্ডেড।
ইসহাক দার নিশ্চিত করেছেন যে, বিজ্ঞাপনটি বিভ্রান্তিকর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের কর্পোরেট সেক্টরকে জড়িত করে পিআইএ-এর বেসরকারীকরণের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
সঙ্কটের ইতিহাস
ব্যবস্থাপনাগত কেলেঙ্কারি, এবং ঋণের বোঝা এয়ারলাইন্সটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে পিআইএ-এর দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক ক্ষতির কারণে পাকিস্তান সরকার প্রথম এটি বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। কিছু পুনর্গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করা হয়, কিন্তু এয়ারলাইন্স ইউনিয়নের বিক্ষোভের মুখে তা বাতিল করা হয়।
নভেম্বর ২০২৪ সালে পিআইএ বেসরকারীকরণের জন্য পাকিস্তান সরকারের শেষ চেষ্টাতেও ব্যর্থতার মুখে পড়ে। শুধুমাত্র একটি বিড জমা পড়ে—ব্লু ওয়ার্ল্ড সিটি, একটি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, যারা ৬০ শতাংশ শেয়ারের জন্য ১০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি অফার করে। এই বিড সরকারের ন্যূনতম চাহিদা ৮৫.০৩ বিলিয়ন রুপির চেয়ে অনেক কম ছিল।
পিআইএ-এর ২০২৩ সালে ৭৫ বিলিয়ন রুপি লোকসান এবং প্রায় ৮২৫ বিলিয়ন রুপির ঋণের বোঝা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে কাঠামোগত সংস্কার চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান সরকার পিআইএ বেসরকারীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, ঐক্যবদ্ধ সরকারের কারণে নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে বেশ কিছু পূর্ব-যোগ্যতাসম্পন্ন বিনিয়োগকারী পিছিয়ে আসেন।