দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
চীনের উচ্চাভিলাষী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কবলে পড়েছে তিব্বত। আন্তর্জাতিক তিব্বত প্রচারাভিযানের এক নব প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চীনের দ্রুতগতির এই জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ তিব্বতের পরিবেশ ও সভ্যতার জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে এই প্রকল্পগুলোকে ‘তিব্বত-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) আগ্রাসী জলবিদ্যুৎ নীতির তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বেইজিং তিব্বতীদের কণ্ঠস্বর, পরিবেশগত ভারসাম্য এবং নদী-নিম্নবর্তী দেশগুলোর কল্যাণের প্রতি কোনো ধরনের মনোযোগ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সিসিপি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে মানবিক ও পরিবেশগত পরিণতির উপরে প্রাধান্য দিচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। শত শত বাঁধ, নির্মিত বা পরিকল্পনাধীন, সমগ্র তিব্বত মালভূমি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু তিব্বত নয়, বাংলাদেশ, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো বেশ কয়েকটি দেশ চীনের এই জলবিদ্যুৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষার শিকার। চীন কর্তৃক পরিচালিত ১৩টি জলবিদ্যুৎ বাঁধের মধ্যে অন্তত ১১টি উজানে জল আটকে রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত। ফলস্বরূপ, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মেকং নদীর প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যা এই দেশগুলোর কৃষি, মৎস্য এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই আধিপত্যবাদী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আশেপাশের দেশগুলোর জন্য অভিশাপ। আন্তর্জাতিক তিব্বত প্রচারাভিযানের সভাপতি টেনচো গ্যাটসো বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের স্তর ও পরিধি অবিশ্বাস্য এবং অসাধারণ’। তিনি তিব্বতী জনগণের অধিকার এবং জলবায়ুর প্রতি বেইজিংয়ের অসম্মান প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন।
প্রতিবেদনে উদ্ঘাটিত হয়েছে যে, বাঁধ প্রকল্পের কাছাকাছি বসবাসকারী ১.২ মিলিয়ন মানুষকে স্থানান্তর করা হবে, যা তাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত করবে। ১০০ মেগাওয়াট বা তার কম ক্ষমতাসম্পন্ন ৮০ শতাংশের বেশি বাঁধ তিব্বতী সভ্যতা, পরিবেশ এবং জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রকল্প প্রস্তাবিত বা প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিচুয়ান প্রদেশের ডের্গে কাউন্টিতে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। ঐতিহাসিকভাবে তিব্বতের অংশ হলেও ডের্গে বর্তমানে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত। প্রতিবাদকারীরা স্থানান্তর আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। এই বিক্ষোভগুলো সরকার দমন করেছে এবং অনেক তিব্বতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দ্য ডিপ্লোম্যাট প্রতিবেদন করেছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, অনেক জলবিদ্যুৎ বাঁধের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (ইএসআইএ) নেই। চীনের নিজস্ব আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। মেড ইন চায়না জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় জেমস লিবোল্ড বলেছেন, তিব্বতে এই প্রকল্পগুলো মূলত বেইজিংয়ের উপনিবেশ স্থাপনের প্রচেষ্টা।