সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। শনিবার হঠাৎ করে ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস। গাজা উপত্যকা থেকে আকাশ, সমুদ্র ও স্থলভাগ থেকে এই হামলা চালানো হয়। এরপর অবরুদ্ধ সমুদ্র উপকূলবর্তী গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল।
এই হামলার পুরো ঘটনাক্রম বর্ণনা করেছে আল জাজিরা। নিচে দেশ টিভির পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
কী ঘটেছে এবং কখন?
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপ হামাস ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে এই অভিযান শুরু করে। ২০২১ সালে উভয়পক্ষের মধ্যে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এবার এত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
হামাস বলছে, তারা ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে। আর ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাস স্থলভাগ, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে হামলা চালিয়েছে।
প্রথম দফায় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় রকেট হামলা চালায় হামাস। এরপর গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’।
এমন এক সময় এই হামলার ঘটনা ঘটল যেদিন ইহুদিরা সুক্কুত নামে তাদের একটি ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে।
কোথায় হামলার ঘটনা ঘটেছে?
তেল আবিরে উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত রকেট ছোড়ে হামাস। তারা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলেও নিজেদের যোদ্ধা পাঠায়।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, সেদারত শহরে পথচারীদের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শহরের রাস্তায় সংঘর্ষ হচ্ছে। আর বন্দুকধারী উপশহরের রাস্তায় জিপ গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের কয়েকটি বেসামরিক সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা সরকারের সাহায্য চাইছে বলেও খবরে দাবি করা হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে তাদের কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, এই মুহূর্তে কাফর আজা, সেদারত, সুফা, নাহাল ওজ, মাগেন, বে’ইরি শহরের আশপাশে ও রে’ইম সামরিক ঘাঁটি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে।
কতজন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে?
গাজার হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক হাজারের বেশি। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৫০ জন।
হামাস কেন ইসরায়েলে হামলা চালাল?
হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল জাজিরাকে বলেছেন, দশকের পর দশক ফিলিস্তিনিরা যে বর্বরতার শিকার হয়েছে, তার জবাবে এই হামলা চালিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় নৃশংসতা বন্ধ করুক, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে, আমাদের পবিত্র স্থান আল-আকসার বিরুদ্ধে। এসব কিছুই এই যুদ্ধ শুরুর পেছনে কারণ।
৫ হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে উল্লেখ করে হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মাদ দেইফ বলেন, পৃথিবীতে শেষ দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য এটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দিন। তিনি বলেন, যার কাছে বন্দুক আছে, তাদের তা বের করা উচিত। সময় এসেছে।
টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে হামাস ‘পশ্চিম তীরের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের’ পাশাপাশি ‘আরব এবং ইসলামিক দেশগুলোকে’ এই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কী বলছে ইসরায়েলি সরকার?
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার কাছাকাছি বসবাসকারী ইসরায়েলিদের তাদের বাড়িতে থাকতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সতর্ক করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তার দেশ একটি যুদ্ধে আছে, যা তারা ‘জিতবে’।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরায়েল ‘এই যুদ্ধে জয়ী হবে।’ তিনি বলেন, হামাস আজ সকালে একটি গুরুতর ভুল করেছে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।
সর্বশেষ অবস্থা কী?
ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের শহরগুলোতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। ইসরায়েলের পুলিশ প্রধান বলেছেন যে দক্ষিণ ইসরায়েলে ২১টি স্থানে লড়াই চলছে।
রামাল্লার ব্যুরো চিফ আল জাজিরার ওয়ালিদ আল-ওমারি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ওফাকিম বসতিতে একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করছে, যারা কিছু মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।
ইসরায়েলের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্তের সময়সীমা বাড়িয়ে রোববার পর্যন্ত দেশের সব কিন্ডারগার্টেন এবং স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবরুদ্ধ ছিটমহলের হাসপাতালগুলোতে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী?
প্রাগের ঐতিহ্যবাহী মিত্র ইসরায়েলে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ শুরু করার জন্য চেক সরকার হামাসের নিন্দা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে ফ্রান্স ‘ইসরায়েল এবং এর মানুষের বিরুদ্ধে চলমান সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা করছে এবং ফ্রান্স ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।
শনিবার ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলায় যুক্তরাজ্য ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা’ করছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি।
শনিবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার দ্বারা পরিচালিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মিশর ‘গুরুতর পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। কায়রো ‘সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন এবং বেসামরিক নাগরিকদের আরও বিপদের সম্মুখীন হওয়া এড়াতে’ আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে লেবাননের গ্রুপ হিজবুল্লাহ শনিবার একটি বিবৃতিতে বলেছে যে তারা গাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে’।
এইউ