সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মানব পাচারকারীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জহিরুল ইসলাম। গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার একদিন আগে এক ভিডিও বার্তায় দায়ীদের নাম ও তাকে নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন।
মৃত্যুর এক দিন আগে নারায়ণগঞ্জের জহিরুল ইসলাম এক ভিডিও বার্তায় জানিয়ে যান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মো. ইসমাইল মানব পাচারকারী চক্রের নেতা। মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সমুদ্রপথে টেকনাফ থেকে তাকে (জহিরুল) মিয়ানমারের নাগরিক জামালের কাছে তুলে দেন। জামাল মিয়ানমারের সীমান্তের ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেন। তাকে দিনের পর দিন জামাল নির্যাতন করেন।
জহিরুলের মৃত্যুর পর তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিচার চেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়। র্যাব অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনগত রাতে জহিরুলের মৃত্যুর জন্য দায়ী মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মো. ইসমাইল, মো. জসীম ও মো. এলাহীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ নিয়ে শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করা হয়। সেখানে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, জহিরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা। ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন নারায়ণগঞ্জের আরেক বাসিন্দা ইসমাইল। কেবল জহিরুল নন, তার মতো আরও ২১ জনকে একই কথা বলেন মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ইসমাইল। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ধাপে ধাপে ওই টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে লিখিত চুক্তিও হয়।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত ১৯ মার্চ বাসে করে জহিরুলসহ ২২ জনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে টেকনাফে নেওয়া হয়। সেখানে আলম নামের একজন জহিরুলসহ সবাইকে টেকনাফের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন একটি ছোট নৌকায় করে ২২ জনকে মিয়ানমারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। মিয়ানমারের নাগরিক জামাল সেখানে তাদের গ্রহণ করেন। তবে মিয়ানমার কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করে মিয়ানমারের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
জহিরুলসহ বাকি তিনজনকে জামাল মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি ক্যাম্পে আটকে রাখেন। পরে জহিরুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ আদায়ে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন জামাল। জহিরুলকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয় তার পরিবারের কাছে। তখন জহিরুলের পরিবার মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য ইসমাইল ও জসিমের মাধ্যমে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠান মিয়ানমারের জামালের কাছে। গত ৯ মে সমুদ্রপথে জহিরুলকে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর হয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠান জামাল। সেখানে জহিরুলকে গ্রহণ করেন মানব পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্য রশিদুল। তিনি জহিরুলের পরিবারের কাছে আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। সেখানেও জহিরুলকে নির্যাতন করা হয়। এরপর জহিরুল গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। ২৮ মে তার মরদেহ বাংলাদেশে আসে।
ভিডিওতে জহিরুলকে বলতে শোনা যায়, দালালে কয় বাড়ি থেকে টাকা দে। বাংলাদেশের দালালেরা কয় টাকা দে। বাংলাদেশের মেইন দালাল হচ্ছে জসীম, ইসমাইল, সাঈদ আর আবুল। আবুলে লোক নিয়ে জসীমগো দিত। পরে লোকগুলোকে টেকনাফে পাঠাইয়া দিত। পরে টেকনাফ থেকে বার্মা পাঠাইলে লোকগুলোর আর কোনো খোঁজ থাকত না। হেরা বার্মার দালালের কাছে বেইচা ফালায়। টেহার জন্য মারধর করেছে। আমার ফ্যামিলি টাকা দিতে পারবে না বলে কইছে, তোরে মাইরা ফেলামু।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মৃত্যুর আগের দিন জহিরুল একটি ভিডিও পাঠিয়ে জানান, ইসমাইলসহ মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে ১৯ জন মিয়ানমারের কারাগারে আছেন। আরও আটজন পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া মালয়েশিয়ার পথে পথে ঘুরছেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ইসমাইল, জসীম, এলাহিসহ দশজনের একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সন্ধান মিলেছে। ইসমাইল, জসীম ও এলাহীর বিরুদ্ধে আগেই মামলা থাকার তথ্য মিলেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে একজনকে মিয়ানমারের জামালের হাতে তুলে দিয়ে ইসমাইল পেতেন ৫০ হাজার টাকা। আর স্থানীয়ভাবে লোক সংগ্রহকারী চক্রের অন্য সদস্য জসিম ও এলাহীরা পেতেন ১০ হাজার টাকা।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল ইসমাইল মালয়েশিয়ায় থাকতেন। পরে দেশে ফিরে তিনি ১০ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র গড়ে তোলেন।
জেডএ