দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুরো সাভার পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আলোচিত শহীদ ইয়ামিন হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঝরে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ। আহত ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা হাজারের অধিক। যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বুকে পাখির মত গুলি চালিয়েছিলেন কারা? সেটি’ই বের করার চেষ্টা করেছে দেশ টিভি ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল সাভার। অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ওদের হাতে হাতে। পুলিশের এপিসির পেছনে অস্ত্র হাতেই অ্যাকশন মুডে ওরা। দেখে মনে হবে, এরা সবাই বিশেষ বাহিনীর সদস্য। তবে না, অস্ত্রধারীদের সবাই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে এভাবেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আর ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে পাখির মতো গুলি ছুঁড়ছেন। অস্ত্র এভাবে অ্যাকশনে যারা ছিলো তাদের আসল পরিচয় কী?
তিনি সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের ডান হাত। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের উপজেলা পর্যায়ের বিতর্কিত সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। রাজিবের কুখ্যাত এই ক্যাডার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে হয়ে ওঠে দানব। সাভারকে পরিণত করে ভয় আর আতঙ্কের জনপদে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র দিয়ে গুলি চালান ছাত্র জনতার বুকে।
ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে অবৈধ অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়ছেন রাজিবের দেহরক্ষী ও কথিত এপিএস সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু আহমেদ।
আর ওই যে ব্যক্তি হেলমেট পরা, নীল গেঞ্জি হাতে গুলি লোড করছেন। তিনি সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গণির ছেলে ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিনের ভাই ক্যাডার মেহেদী হাসান তুষার।
ডাবল ব্যারেলের শট গান হাতে দাপিয়ে বেড়ানো ব্যক্তিটি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের মূর্তিমান আতঙ্ক, সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান সুজন।
জিন্স প্যান্ট আর সাদা গেঞ্জি গায়ে এই ব্যক্তি সাভারের বনগাঁটা্ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ভাতিজা ও যুবলীগ নেতা ফরিদ আহমেদ।
মাথায় হেলমেট গায়ে সাদা গেঞ্জি, পরনে জিন্স প্যান্ট। ডান হাতে পিস্তল নিয়ে আতিকের সঙ্গী এই ব্যক্তি সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জামান খান।
আতিক ও জামানের বহরে লাল পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরণে এই ব্যক্তি ছাত্রলীগ নেতা আতিকের অবৈধ অর্থের ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম।
আমরা যাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরছি তারা হাজারো ক্যাডারদের মধ্যে কয়েকজন মাত্র।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এরপর থেকে লাপাত্তা সশস্ত্র এই সন্ত্রাসীরাও। ইতিহাসের সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অধরা সশস্ত্র এই স্বৈরাচারী সরকারের প্রেতাত্মারা। সূত্র বলছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের সহযোগিতায় এই ঘাতকরা ইতোমধ্যেই দলে দলে দেশ ছেড়েছেন। নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশে।
বিস্তৃত গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও তৎপরতা সত্ত্বেও কেন ধরা পড়লো না এই সন্ত্রাসীরা। কিভাবে পালিয়ে গেল এই ঘাতকরা? কাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে একে একে নিরাপদে তারা পালালো দেশ ছেড়ে? েএমন সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মনে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার দিকে আঙ্গুল তুলে এ প্রশ্নেই সরব হয়ে উঠেছেন ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্বজন ও আহত ছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
রক্ত ভেজা ইতিহাসের পরিক্রমায় দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত পুলিশ সদস্যদের অনেকেই এখন থানার ওসির মতো ভালো পোস্টিং পেয়েছেন। বলছেন জড়িতদের যেকোনো মূল্যে গ্রেফতারের কথা।
জুলাই আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি, বিচার প্রক্রিয়া এখনো বহুদূর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাজুক তৎপরতার সুযোগ নিয়ে একে একে লাপাত্তা সশস্ত্র অস্ত্রধারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। আন্দোলনকারীদের দাবি ছাত্র জনতাকে গুলি করা এই সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার । এসব খুনিরা পার পেয়ে গেলে শান্তি পাবে না শহীদের আত্মা। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না তাদের স্বজন ও আহতরা।
কে