সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার লেদা গ্রামে এক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আত্মরক্ষায় ছোড়া বিজিবির গুলিতে এক পথচারী রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
এছাড়া গুলিতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ-ছয় জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছেন এক বিজিবির সদস্যও। আহতদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইওএম হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসা জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব লেদা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মৌলভি মোহাম্মদ রফিক (৩২) লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক/১৩ এর সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
আহতরা হলেন, হ্নীলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম রাজু, একই এলাকার নুর হোছেনের ছেলে মো. ইসমাঈল, মো. উসমান, হ্নীলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাদিমুড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে টমটমচালক ওসমান। বাকিদের নাম এখনো জানা যায়নি।
এসময় টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে জাফর ইকবালকে (৪০) আটক করেন বিজিবির সদস্যরা।
স্থানীয় ফাহাদ জানান, তার দুলাভাই জাফর আলম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি গতকাল বাড়ি ফিরেছেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে জাফর ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে লেদা বাজারে যাওয়ার পথে শুনতে পান তার ভাই রবিউল আলমকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মারধর করছেন। কেন তাকে মারধর করছেন জানতে তিনি সেখানে গেলে রবিউলকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটান বিজিবি সদস্যরা।
তিনি আরও জানান, এসময় জাফরের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে কেন তাকে আটক করা হয় তা জানতে চান। একপর্যায়ে ঘটনাটি বাগবিতণ্ডায় রূপ নেয়। স্থানীয় জনতা জড়ো হলে হৈ চৈ শুরু হয়। পরে বিজিবি সদস্যরা অকস্মাৎ গুলি ছুঁড়লে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যার। এসময় আরও বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর হুদা বলেন, বুধবার দুপুরের দিকে জাফর আলমকে লেদা বাজার থেকে বিজিবির সদস্যরা আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব লেদা বাজারে তার আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা হাইওয়ে সড়কের ওপর বাধা দেয়। এসময় জাফরের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গুলিতে মৌলভি রফিক নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এসময় আরও পাঁচ-ছয় জন স্থানীয় লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন বিজিবির এক সদস্যও। বিজিবির ছোঁড়া গুলিতে লেদা জামে মসজিদের জানালার গ্লাস ছিদ্র হয়ে গুরা মিয়া নামে এক বৃদ্ধ মুসল্লির গায়ে গুলি লাগে। লেদা বাজারের একটি বাসার দেওয়ালেও গুলি লেগেছে।
নিহত মৌলভি রফিকের বড় ভাই মো. ইউসুফ বলেন, আমার ভাই লেদা বাজার থেকে ক্যাম্পে ফেরার পথে গুলিতে মারা গেছেন।
তবে, ব্যক্তিগত কাজে বর্তমানে ঢাকায় আছেন জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, শুনেছি লেদার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমের ভাই জাফর আলমের বাড়িতে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এসময় ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে। বিজিবি পাল্টা গুলি করলে একজন নিহতসহ পাঁচ-ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ঘটনাটি শুনেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর শুনেছি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, হ্নীলার লেদা বাজারে বিজিবি ও স্থানীয়দের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে শুনলাম। তবে কী কারণে ঘটনা ঘটেছে তা বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, বিপুল ইয়াবাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জাফর আলম নামে এক ইয়াবা কারবারিকে আটক করা হয়। এ অভিযানে গেলে বিজিবির ওপর হামলা, গুলি ও পাল্টা গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাহত রয়েছে। বিষয়টি বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
জেবি