দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে খেলা বন্ধ করার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও ও থানার ওসি ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের পর ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমারকে আহবায়ক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ওসি, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ও ছাত্রদের মধ্য মাহফুজ আহমেদকে সদস্য করা হয়।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে ওই মাঠে ইউএনও এবং ওসিসহ সেনাবাহিনীর একটি দল খেলার মাঠে উপস্থিত হোন। সেখানে খেলা বন্ধের প্রতিবাদ ও মাঠ ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের মধ্য কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের দাবি এখানে সামান্য ভুল বোঝাবোঝির কারণে গত মঙ্গলবারে ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন তাঁরা। এই মাঠে আর নারী ফুটবল খেলতে আর কোন বাঁধা নেই।
শুক্রবার বেলা ১১ টায় তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দেখা গেছে, সেখানে কয়েকটি ডেকোরেটারের চেয়ার টেবিল ফেলানো রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম ও থানার পরিদর্শক (ওসি) আনিছুর রহমান এবং ছাত্রদের প্রতিনিধি মাহফুজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় গত মঙ্গলবারে খেলার মাঠে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে ওই মাঠে দেখা যায়। এসময় তখন টি স্টার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খাজা হোসেন উত্তেজিত হয়ে বলতে দেখা যায় “গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসন তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছে, সেটির ব্রিফ হবে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে তিলকপুরের নারী ফুটবল ম্যাচ খেলার মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুর ও খেলা বন্ধের ঘটনায় অর্ন্তবর্তী সরকার নিন্দা জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে নারী ফুটবল ম্যাচটি চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী ও পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম, থানার পরিদর্শক (ওসি) আনিছুর রহমান ঘটনাস্থলে খেলার মাঠ পরিদর্শন করেন। তারা আশপাশের লোকজন, আয়োজক কমিটি, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বাচ্চা হাজী কওমী মাদরাসার গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে চলে আসেন।
স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিলকপুরের টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে থেকে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ওই ক্লাবের সভাপতি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে মাটিতে বসে খেলা দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ার বসে খেলা দেখার জন্য ৭০ টাকা টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল। ফাইনাল ম্যাচের আগে আয়োজক কমিটি ওই মাঠে ৩০ টাকা ও ৭০ টাকা টিকেটে জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচের ঘোষণা দিয়ে এলাকায় মাইকিং করে প্রচার করে। তখন থেকেই স্থানীয় আলেম সমাজ বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা করে। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে একদল মুসল্লি ও মাদরাসার ছাত্ররা হামলা চালিয়ে খেলার মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। ঘটনাটি আবার হামলাকারীদের মধ্য থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে সেই দৃশ্য প্রচার করা হয়। ওই ঘটনার পর আয়োজকেরা গত বুধবার বিকেলের প্রীতি নারী ফুটবল ম্যাচটি বাতিল করেন।
এসময় ভাঙচুর কারীর কয়েকজন বলেন, গত মঙ্গলবারে তিলকপুরে নারী ফুটবল খেলা নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের মধ্য সামান্য ভুল বোঝাবোঝির কারণে যা হয়েছে তাতে আমরা দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত। আমরা ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করব না। যেখানে সরকার খেলাকে বৈধতা দিয়েছে সেখানে সরকারে বিরুদ্ধে আর কখনও যাব না। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমরা যা করছি এখান থেকে আমরা লজ্জিত, ভবিষ্যতে জয়পুরহাট জেলাতে আর কখনো এই ধরনের কাজ হবে না। আমরা নারী খেলার বিষয়ে মাথা গলাব না। আমরা আইন শৃঙ্খলাকে শ্রদ্ধা জানাই। সরকারী নিয়ম নীতিতে খেলা হোক এটা আমরাও চাই। আলেম ওলামাদের মধ্য ভুল বোঝাবোঝির কারণে এই বিষয়টি ঘটেছে। সামনের দিনে আর যেন না ঘটে আমরা সেটিই চাচ্ছি। সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যেতে চাই না।
তিলকপুর পুরাতন বাজার জামে মসজিদের খতিব আব্দুস সামাদ বলেন, খেলার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো পদক্ষেপ ছিল না। তবে সামান্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবোঝির কারণে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দুঃখ্য প্রকাশ করছি। খেলা উন্মুক্তভাবে চললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। টি স্টার ক্লাবের সভাপতি ও উপজেরা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন বলেন, তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল একটি ভুল বোঝাবোঝির বিষয়। আমরা আলেম সমাজের সঙ্গে একত্র হয়ে বিষয়টি মিমাংসা করেছি।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, আমরা সবকিছু মিলিয়ে সমাধানের পথে চলে এসেছি। এখানকার যারা জনগণ তারা সবাই একসঙ্গে হয়েছেন। এখানে আর খেলা পরিচালনা করার জন্য কোনো বাধা নেই। খুব দ্রুতই আমরা খেলা পরিচালনা করতে পারব।
আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, তিলকপুর মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে নিয়ে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে ভুল বোঝাবোঝি নিয়ে খেলাটি নিয়ে এই ঘটনাটি ঘটে ছিল। সেটির প্রায় সমাধান হয়েছে,এখানে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক) বিপুল কুমারের বলেন, তদন্ত চলছে। আরো অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এর আগে তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনার খেলা বন্ধ রাখেন আয়োজকরা।
এফএইচ/