দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
১২ বছর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় আপন ভাইকে ভেবে নিরীহ কৃষক বাদল ওরফে বদরুলকে হত্যার দায়ে ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হালিম বলেন, বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আবুল মনসুর মিঞা এক আসামির উপস্থিতিতে এই রায় প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ জনকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের আনছারুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীরা হলেন - ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের কাশমত আলীর ছেলে আফছার আলী, একই গ্রামের শহর আলীর ছেলে সুমন ও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার মধ্যবনগাঁও গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে সাগর।
মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হালিম বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মিজানুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার আপন বড়ভাই মোখলেছের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। বড়ভাই মোখলেছকে হত্যা করলে পিতার সমস্ত সম্পত্তি নিজের হবে মর্মে পরিকল্পনা করে এবং মোখলেছকে হত্যার জন্য আফছার আলী, সাগর ও সুমনের সাথে ২ লাখ টাকার চুক্তি করে মিজানুর।
তিনি বলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৩ সালের ১০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার সময় ঘটনাস্থলে মোখলেছকে হত্যার উদ্দ্যেশে অপেক্ষা করে আসামীরা। কিন্তু ঠিক ওই সময় বাদল ওরফে বদরুল সেই মাটির রাস্তা দিয়ে পার্শবর্তী হাজীপুর হিন্দুপাড়ায় তার বন্ধু রাজেন্দ্র নাথের ছেলের অন্নপ্রাসনের দাওয়াত খাওয়ার উদ্দ্যেশে যাচ্ছিলেন। এসময় আফছার আলী, সাগর ও সুমন নিরীহ কৃষক বাদলকে মোখলেছ ভেবে ভুল করে অন্ধকারে তার গলাকেটে হত্যা ও মৃত্যু নিশ্চিতে মাথায় বেধরক আঘাত করে। পরে বাদলের মৃত্যু হলে তাকে পার্শবর্তী আখক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। পরদিন সকালে স্থানীয়রা বাদলের মরদেহ দেখতে পেয়ে তার পরিবার ও পুলিশে খবর দেয়।
এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১১ জুলাই মৃত বাদলের বড়ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আব্দুল হালিম বলেন, তৎকালীন পীরগঞ্জ থানার এসআই রায়হান আলী ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিজানুর রহমান, আফসার আলী, সাগর ও সুমনকে গ্রেপ্তার করে এবং গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দেন। পরে আদালত আফছার আলী, সাগর ও সুমনকে জামিন দিলেও পরবর্তীতে তারা আর আদালতে হাজিরা দিতে আসেন নাই।
এই ঘটনা তদন্ত করে এসআই রায়হান আলী ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর আসামী মিজানুর রহমান, আফসার আলী, সাগর ও সুমন অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ উক্ত চার্জশিটে আপত্তি উত্থাপন করলে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ রানা পুণরায় তদন্ত করে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আসামী মিজানুর রহমান, আফসার আলী, সাগর ও সুমনকে উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পাওয়ার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এবং আদালত তা আমলে নিয়ে বিচারকজ শুরু করেন।
আইনজীবী আব্দুল হালিম বলেন, দীর্ঘদিন সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রমাণ সাপেক্ষে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আসামি মিজানুর রহমান, আফসার আলী, সাগর ও সুমনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এই রায়ের মাধ্যমে বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
এফএইচ/