সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নে একটি বাজার জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ পরিস্থিতিতে গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বাজারে টোল আদায় করতে পারছেন না সরকারিভাবে দায়িত্ব পাওয়া ইজারাদার ও তার প্রতিনিধি। ইজারাদার, তার প্রতিনিধি স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না । এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাবে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও কমে আসছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ সরকারি নীতিমালা ও বিধিবিধান অনুযায়ী হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় হতে হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের হাতিয়া বাজার ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য ইজারা দেওয়া হয় আবদুল হক নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাজারটি এক বছরের জন্য ইজারা নেন। পরবর্তীতে তিনি নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে বাজার দেখাশোনা ও টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসমাইল হোসেন (৫৫) ও মো. আবদুর রহমানসহ (৪৮) ১২ জনকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করে দায়িত্ব অর্পণ করেন। সে অনুযায়ী তারা গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত খাজনা ও টোল আদায় করছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই এলাকার আতর আলী, নোয়াব আলী ও আশরাদ আলীসহ একদল লোক নিজেদেরকে বিএনপির নেতাকর্মী দাবি করে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গরুর হাটসহ অন্যান্য হাট দখল করে হাসিল ও টোল আদায় শুরু করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গরুর বাজার থেকে হাসিল এবং অন্যান্য বাজার থেকে টোল আদায় করতে দেখা যায়। অভিযুক্ত আতর আলী হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। বাজারে তিনি দলবল নিয়ে গরুর বাজারে হাসিল আদায় তদারকি করছিলেন।
তিনি বলেন, ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের লোকজন এই বাজার দখল করে খেয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেছে। তিনি মূল ইজারাদার আবদুল হকের কাছ থেকে লিখিত দায়িত্ব পেয়ে টোল আদায় করছেন। কিন্তু লিখিত কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।
বাজারে নিয়মিত গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে আসেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা অনেক বাজারে নিয়মিত এসবের বেচাকেনা করেন। কিন্তু হাতিয়া বাজার ছাড়া আশেপাশের উপজেলারও কোনো বাজারে এমন অবস্থা তারা দেখেননি। এখানে কিছু লোক আগের ইজারাদারের লোকজনকে হটিয়ে নিজেরা বাজার দখল করে ইচ্ছা মতো টোল আদায় করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নাজেহাল করছেন। লাখ লাখ টাকার লেনদেন করতে হয় তাদের। এখন তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এ কারণে গত তিন মাসে অনেক ব্যবসায়ী এই বাজারে পশু আনাও কমিয়ে দিয়েছেন।
বাজারের মূল ইজারাদার আবদুল হক বলেন, তিনি বাজারের ইজারা পাওয়ার পর ইসমাইল ও আবদুর রহমানসহ ১২ জনকে তার পক্ষে বাজার থেকে টোল আদায়ের যাবতীয় ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন। তিনি আতর আলী কিংবা অন্য কাউকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেননি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর আতর আলীসহ কিছু লোক তার লোকজনকে বাজারে টোল আদায় করতে দিচ্ছেন না। নিজেরাই বাজারের টোল আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছেন।
আবদুল হক আরও জানান, তিনি যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এখনও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
দায়িত্ব পাওয়া মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তাদের পক্ষে ইজারা নেওয়া বাজার তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির পরিচয় দিয়ে একদল দখল করে টোলের টাকা আদায় করছেন। প্রত্যেক হাটের দিনে তারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বাজারের আশেপাশে জড়ো রাখেন। যাতে তাদের লোকজন বাজারে ঢুকতে না পারেন। বাজার দখলের বিষয়ে তারা গত ৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসক সেটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট পাঠিয়েছেন। ইউএনও পাঠিয়েছেন থানায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের বাজার অবৈধ দখলমুক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। অথচ ইজারার সব টাকাই তারা কার্যাদেশ পাওয়ার আগে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন।
হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন দাবি করেন, যারা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বাজার দখল করেছে তারা বিএনপির কেউ নয়। তারা এক সময় আওয়ামী লীগের লেজুড়ভিত্তি করে চলেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর রাতারাতি তারা নিজেদের খোলস পাল্টে বিএনপি বনে গেছে। বিএনপির কোন পর্যায়ে তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। তাদের কোনো অপকর্মের দায় নেবে না বিএনপি। প্রশাসন কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে? কেন দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেই প্রশ্ন স্থানীয় এই বিএনপির নেতার।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, যারা বাজার দখল করে রেখেছেন তারা দাবি করছেন তারাও নাকি মূল ইজারাদারের কাছ থেকে বাজারের টোল আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছেন। কাগজপত্র নিয়ে থানায় এলে যাচাইবাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরএ