সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বকেয়া বেতন ও বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে ৫টি পোশাক কারখানা ও একটি বেভারেজ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বেশ কিছু কারখানা।
শ্রমিক সংগঠন ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের জিরানী, সদর উপজেলার বাংলা বাজার, তিন সড়ক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত সময়ে বেতন প্রদান, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি ও বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। আগস্ট মাসের বেতনের দাবিতে চক্রবর্তী এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। বুধবার সকালে উত্তেজিত শ্রমিকরা কালিয়াকৈরের চন্দ্র-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তিন সড়ক এলাকায় কর্মীদের সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা বেতন, ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীরা। এছাড়া বাংলাবাজার এলাকায় পারটেক্স বেভারেজ নামের কারখানায়ও দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশকিছু শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বেতনের দাবি করে আসছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেতন দেওয়ার কথা জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার কিছু শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হলেও বেশিরভাগ শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে বেতন যায়নি। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।
আড়ং ডেইরি কারখানার শ্রমিকরা জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, কর্মীদের বেতন সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা, ক্যাজুয়াল কর্মীদের মাতৃত্ব ভাতা ও ছুটি প্রদান, এডমিনের পদত্যাগ, বাৎসরিক ছুটি প্রদানসহ নানা দাবি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, দুপুরে ২টার দিকে কাশিমপুর এলাকায় বিগবস নামে একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে তাদের ওপর চড়াও হন শ্রমিকরা। এসময় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে গুদামে লাগা আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।
এদিকে, মঙ্গলবার বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের জেরে ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গতকাল টঙ্গীতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় পিনাকি গ্রুপ, যমুনা, ড্রেসম্যান ও নোমান গ্রুপে। পরে ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে গার্মেন্টসের মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও আন্দোলনকারী শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে শ্রমিকদের সকল দাবি মেনে নেন।
অপরদিকে, কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়া গাজীপুরে অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন সেকশনে কাজ করছেন তারা। কারখানা নিরাপত্তায় নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াও শিল্প পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম বলেন, বেতন ভাতা বাড়ানো, নিয়মিত বেতন প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে টি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া মঙ্গলবার ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিকরা সময় দিচ্ছেন না। তারা বিক্ষোভ করছেন।
আরএ