দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে নিজের জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বছরের পর বছর বিধবা ভাতার টাকা উত্তোলন করছেন কিছু নারী। বিষয়টি প্রকাশ হতেই এলাকাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নোয়াখালী হাতিয়া পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাতা বঞ্চিত সাধারণ নাগরিকরা। এমন দূর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত সকলের শাস্তির দাবি করেন তারা।
হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মধ্য লক্ষিদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুমা বেগমের বিধবা ভাতা উত্তোলনের মাধ্যমে ঘটনার জানাজানির সূত্রপাত ঘটে। কুলসুমা বেগম গত তিন বছর ধরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা হিসেবে ভাতার আওতায় বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৫৫৮। ভাতার বইতে স্বামীকে মৃত দেখানো হলেও আজও তিনি জীবিত আছেন। এমন কি তার পরিবারের অন্য সদস্যরা সুস্থ্য হওয়ার পরেও পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।
কুলসুমা বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের চরলটিয়া গ্রাামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি উপজেলা সদর ওছখালী পুরাতন বাজারের একজন ব্যবসায়ী।
একই এলাকার মৃত আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম নামে এক মহিলা ২০২১ সাল থেকে পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৪৫৯। ভুয়া কাগজপত্র এবং তথ্য গোপন করে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে এ ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি। অথচ তার স্বামী আমিরুল ইসলাম এখনো জীবিত এবং স্বাবলম্বী।
কুলসুমা ও স্বপ্না বেগমের মত অনেকে জনপ্রতিনিধিদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সকল ধরণের ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ সমাজে এখনো অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা ভাতা পাওয়ার উপযোগী কিন্তু তারা ভাতা পাচ্ছেনা। অনেকে একাধিকবার আবেদন করেও ভাতার তালিকায় নিজের নাম লিপিবদ্ধ করতে পারেনি।
হাতিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তথ্য মতে ৩৯,৯৮৪জন সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীর ভাতা ভোগী রয়েছে। তারমধ্যে বয়স্ক ভাতা ১৮,৭১৪জন, বিধবা ভাতা ৯,৯৯২জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ১১,০৩৩জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাপ্ত ৫৩ জন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠির বিশেষ ভাতা ১৬৯ জন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ২৩জন। উল্লিখিত ভাতাভোগীদের মধ্যে বহু সংখ্যক ব্যক্তি অবৈধ ভাবে ভাতা সুবিধা গ্রহণ করছেন বলে স্থানীয় পর্যায় থেকে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসকল অনিয়ম করছেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছেমত নাম্বার দিয়ে একাউন্ট করে নিজেদের পছন্দের লোকদেরকে ভাতা পাইয়ে দিচ্ছেন। আবার প্রকৃত ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত হলেও জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোক না হলে তার ভাতার কার্ড হয়না।
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার রোকেয়া বেগম (৫২) নামের এক বিধবা মহিলা বলেন, ২০০১ সালে আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিননপার করছি। আমি কয়েকবার এলাকার ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে বিধবা ভাতার আবেদন করেও আজ পর্যন্ত বিধবা ভাতার কার্ড করতে পারিনি।
এ বিষয়ে কুলসুমা বেগম প্রথমে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী আছে, তবে আমার বাড়ির পাশের এক ব্যক্তি রহমত কমিশনারের সাথে কথা বলে ভাতার কার্ড ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে ভাতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে বলে স্বামী নেই । পরে বলেন অভাব অনটনের কারণে আমি কমিশনারের মাধ্যমে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলাম। আবেদনের পরিপেক্ষিতে আমাকে ভাতা দেয়া হয়।
কুলসুমা বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম ও স্বপ্না বেগমের স্বামী আমিরুল ইসলামের কাছে তাদের স্ত্রীদের বিধবা ভাতা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তারা এবিষয়ে অবহিত নন। এর বেশি তারা কিছু বলতে চায়নি। হাতিয়া পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রহমত উল্লাহ বলেন, এখানে সমাজসেবা অফিসেও সরাসরি অনেক কাজ হয়ে থাকে, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও কিছু কাজ হয়ে থাকে, অনেক কাজেই আমরা অবহিত থাকি না।
এবিষয়ে হাতিয়া সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাজী মো: ইমরান হোসেন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা অনলাইনে আবেদন করেন। আমাদের কাছে শুধুমাত্র অনলাইনের আবেদন করা ফরমগুলো জমা দেয়। যার কারণে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের যেভাবে লাইভ ভেরিফাই করা যায় সেভাবে বিধবা ভাতা প্রত্যাশীদের ভেরিফাই করার সুযোগ হয়না। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হলাম। অফিসিয়ালি তদন্তপূর্বক উক্ত বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এম