সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দাবদাহ চলছে সারাদেশে। এর প্রভাব পড়ছে মানুষ পশুপাখি ছাড়াও প্রকৃতি এবং জড়বস্তুতে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ময়মনসিংহের সবোর্চ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রেললাইনে নজরদাররি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন কতৃর্পক্ষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত ঠান্ডা ও গরমের কারণে রেললাইন ও সংকুচিত এবং সম্প্রসারিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন সময় দেশ ও দেশের বাহিরে এই দুই কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তারা বলছেন, ঠান্ডায় লোহা সংকুচিত হয়, গরমে প্রসারিত হয়। সাধারণত গরমে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু অন্যান্য জিনিসের চেয়ে ধাতু অনেক বেশি তাপ পরিবহন করে। যেমন তাপমাত্রা যদি ৩০—৩৫ ডিগ্রি থাকে রেললাইনের পাতে সেটা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
এজন্য রেলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকে যায়। যার কারণে লাইনে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ লাইন মেরামতে কাজ চলমান রয়েছে।
রেলওয়ের ময়মনসিংহ জোন হচ্ছে ময়মনসিংহ থেকে শ্রীপুর, বিদ্যাগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, আঠারোবাড়ি, জারিয়া-জাঞ্জাইল এবং ভৈরব রেলপথের মোট ২০২ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেলপথের কোথাও কোথাও বছরের পর বছর অযত্নে—অবহেলায় পড়ে থেকে পচন ধরেছে স্লিপারে। কোনো কোনো স্থানে আবার অস্তিত্বই নেই নাট—বল্টু বা হুকের। বেহাল অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতুগুলোরও। কাঠের স্লিপারের ওপর লাইন বসিয়ে আটকানো হয় ক্লিপ দিয়ে। প্রতিটি স্লিপারের দুই পাশে কমপক্ষে আটটি করে ক্লিপ থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্লিপারের সঙ্গেই ক্লিপের বালাই নেই। গরমে এইসব স্থানে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকার বাসিন্দা শাহদাত হোসেন বলেন, নগরীর মধ্যেই রেললাইনের খারাপ অবস্থা। কংক্রিটের স্লিপারের পাশাপাশি রয়েছে কাঠের স্লিপার। কাঠের স্লিপারের বেশির অংশে নেই নাট—বল্টু। যার কারণে তীব্র গরমে রেললাইন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে কতৃর্পক্ষের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
গৌরীপুরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান জনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। এরপর থেকে সামান্য মেরামত ছাড়া বড় কোন ধরনের মেরামতের উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। গৌরীপুর থেকে ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন একেবারেই ধীরে ধীরে চলে। অনেক স্থানে নেই স্লিপার তা থাকলেও নাট—বল্টু কম। মাঝে—মধ্যেই স্থানীয়রা নাট—বল্টু তুলে নিয়ে যায়। সেগুলো ভালো করে লাগানোও হয়নি। এখন যে গরম পড়ছে যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তা অস্বাভাবিক বলে হবে না।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এসএম আনোয়ারুল হক বলেন, রেললাইন লোহা দিয়ে তৈরি। আর লোহা গরম শোষণ করে। যার কারণে তাপমাত্রা বেশি হলে রেললাইন বেঁকে যায়। অনেক দেশ এই সমস্যা সমাধানে রেললাইনে ব্যবহার করছে সাদা রং। কারণ সাদা রং সবচেয়ে কম তাপ শোষণ করে। এতে তাপমাত্রা কম হয় ৫—১০ ডিগ্রি পর্যন্ত।
রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে হলে দুই পাশে গাছপালা লাগানো যেতে পারে। তাতে লাভ হয় দুটি। বন্যায় রেললাইনের নিচের মাটি সহজে সরে না। সেইসঙ্গে রেললাইন গরম কম হয়। কিন্তু গাছপালা না থাকলে সরাসরি সূর্যের তাপে গরম হয়ে রেললাইনের লোহার আকার বেড়ে যেতে পারে। তখন সেগুলো এঁকেবেঁকে জায়গা করে দেয় অতিরিক্ত অংশগুলোকে। এক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোও প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আকরাম আলী বলেন, আমরা ছোট সময়েই বই পুস্তকে পড়েছি অতিরিক্ত গরমে রেললাইন সম্প্রসারিত হয়ে বেঁকে যায়; আর ঠাণ্ডায় সংকুচিত হয়। এবার সারা দেশে তাপপ্রবাহ চলছে; সে বিষয়টি মাথায় রেখে ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নির্দেশে রেললাইনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুরাতন লাইন সংস্কারের পাশাপাশি নতুন লাইন যেন ক্রুটিমুক্ত থাকে আমরা খেয়াল রাখছি। গরমে টহল টিমের সদস্য বাড়ানো হয়েছে; যদি সমস্যার কোনো ধরনের নমুনা পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে খুঁটি দেওয়ার পাশাপাশি টেকনিক্যাল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে এখনও পর্যন্ত পড়েনি। তদারকি বৃদ্ধি করতে প্রতি ঘ্যাংয়ে অতিরিক্ত একজন দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় তদারকি বাড়ানো হয়েছে। ২৫ কিলোর মতো লাইন রেন্যুয়াল করা হয়েছে; বাকি পুরাতন লাইন। আশা রাখছি সমস্যা হবে না।
জেবি