সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীর একটি মন্দিরে আগুনের ঘটনায় রিউমার বা গুজব ছড়িয়ে এলাকায় মানুষদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে শ্রমিকদের গণপিটুনি দেওয়া হয়। এতে দুই সহোদর নিহত হন, আহত হন আরও পাঁচ নির্মাণ শ্রমিক।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ফরিদপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, দ্বিতীয়টি দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার এবং তৃতীয়টি পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি মোর্শেদ আলম বলেন, ওই এলাকাসহ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন-এর ২শ অফিসার-ফোর্স এবং আরআরএফ এর ১৫১ জন অফিসার-ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব-১০-এর দুটি মোবাইল টিম মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মন্দিরে সন্ধ্যা বাতি দেয়া হয়েছিলো। এর কিছুক্ষণ পর প্রতিমায় আগুন ও এর জের ধরে কয়েকজনের ওপর হামলা হলে দুজনের মৃত্যু হয়।
জানা যায়, ডুমাইন ইউনিয়নে পঞ্চপল্লী এলাকা সার্বজনীন কালীমন্দিরটি অবস্থিত। এটি ছোট আকৃতির এবং এর চারদিকে দেয়াল আর উপরে চৌচালা টিন। আর সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকানো।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওই মন্দিরে সন্ধ্যা বাতি জ্বালানোর কাজটি করেন মালতী মণ্ডল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে তিনি প্রদীপ নিয়ে মন্দিরে গিয়েছিলেন। এসময় স্কুলের শৌচাগার নির্মাণের জন্য পাশেই কয়েকদিন ধরে কাজ করছিলেন একদল শ্রমিক, যাদের বাড়িঘর অন্য এলাকায়।
পুরো এলাকাটিতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করেন এবং আশেপাশে তেমন কোন মুসলিম বসতি নেই। ফলে সন্ধ্যার পর প্রতিমায় আগুনের খবর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পড়লে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
অন্যদিকে তখন মন্দিরের পাশের স্কুলে ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। সেখানে চার জন নির্মাণ শ্রমিক, একজন রডমিস্ত্রী, একজন শ্রমিক সর্দার এবং আরেকজন নসিমন চালক ছিলেন।
সন্ধ্যার পরপরই প্রতিমায় আগুনের খবর স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন জমায়েত করে কাছেই থাকা শ্রমিকদের ধরে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এ সময় তারা একটি নসিমন (স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহৃত যানবাহন) পুড়িয়ে দেয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ইউএনও এবং থানার ওসিকে জানান। তারাও ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে আরও পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি করে শ্রমিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পরে রাতেই দুজনের মৃত্যু হয়। সে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। তিনি বলেন, ওই ঘটনাটি (প্রতিমায় আগুন) পাশের ওই শ্রমিকদের দ্বারা হতে পারে এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই তাদের ওপর হামলার ঘটনা হতে পারে এবং কারা হামলায় জড়িত সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে আহত শ্রমিকদের মধ্যে দুজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং আরও একজন ফরিদপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
যে দুই ভাই মারা গেছেন তারা হলেন- মধুখালীর নওপাড়া ইউনিয়নের শাজাহান খানের ছেলে আশরাফুল খান ও তার ভাই আসাদুল খান। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ডিপি/