সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার খামার বেলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের টিনসেট ঘরে চলছে এইচ আর এম মোহাম্মদিয়া ক্যাডেট মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম।
প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) সাইফুর রহমানের অবহেলায় প্রতিষ্ঠানের স্কুল হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীদের নাম থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিত শিক্ষা পাঠদানের ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয় মাঠের এইচ আর এম মোহাম্মদিয়া ক্যাডেট মাদরাসায় পড়াশুনা করাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীর অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
তবে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক বলছেন তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের খামার বেলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক একর ৩৬ শতক জমিতে অবস্থিত। প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশ করে অত্র বিদ্যালয় মাঠে হাফেজ রাসেল মাহমুদ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এইচ আর এম মোহাম্মদিয়া ক্যাডেট মাদরাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতাভুক্ত অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, মোছা. সেলিমা খাতুন, মোছা. আফরোজা খাতুন, মোছা. মুক্তা খাতুন ও মোছা. পরিভান খাতুনও বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। ফলে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী মাত্র ৪০ থেকে ৫০জন।
গত সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০মিনিটের দিকে খামার বেলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গেলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেন।
তাৎক্ষণিক কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি অবগত করামাত্র সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানশিক্ষক সাইফুর রহমান অনুপস্থিত। সহকারী শিক্ষক মোছা. পরভীন খাতুন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, মোছা. সেলিমা খাতুন, মোছা. আফরোজা খাতুন, মোছা. মুক্তা খাতুন প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা তৃতীয় শ্রেণিতে সাতজন, চতুর্থ শ্রেণিতে তিনজন ও পঞ্চম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন।
৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে এসএমসি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও অদ্যাবদি পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক কমিটি গঠন করেনি। অপরদিকে প্রধান শিক্ষক সরকারের বরাদ্দকৃত স্লিপ ৫০ হাজার, রুটিন ম্যানটেনেজ ৪০ হাজার টাকার কাজ না করেই আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, আজ স্কুলে ১১জন লেখাপড়া করছি। আমার ক্লাসের সব বন্ধুর নাম বিদ্যালয়ে থাকলেও তারা বিদ্যালয় মাঠের ক্যাডেট মাদরাসায় লেখাপড়া করেন।
খামার বেলদহ এলাকার জহুরুল ইসলাম, মনোয়ারা বেগম, আ. সাত্তার ব্যাপারীসহ জানান, প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমানের অবহেলায় বিদ্যালয়ের লেখাপড়া অচল অবস্থা। বিদ্যালয় মাঠে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বেলদহ এইচ আর এম মোহাম্মদিয়া ক্যাডেট মাদারাসার টিনসেট ঘরে ছেলে-মেয়েদের পড়ানো হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার কারণে শিক্ষার্থীর অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাঠদান। প্রধান শিক্ষক অনেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। আর সরকারের বরাদ্দকৃত টাকাও যাচ্ছে প্রধানশিক্ষকের পেটে।
অভিভাবক তাইজুল ইসলাম জনি বলেন, ইতোপূর্বে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল ভরপুর। প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) সাইফুর রহমান তিলাই ইউনিয়নের ধামেরহাট (পশ্চিম ছাটগোপালপুর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে পাইকেরছড়া ইউনিয়নের খামার বেলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি যোগদান করার পর থেকে স্কুল অচল অবস্থা। বিদ্যালয়ে নেই এসএমসি কমিটি। নিজের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. সেলিমা খাতুন বলেন, বিদ্যালয় মাঠে ক্যাডেট মাদরাসার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এজন্য প্রধান শিক্ষক স্যার দায়ী। সরকারের বরাদ্দকৃত টাকায় প্রধান শিক্ষক স্কুলে একটি পানির ট্যাঙ্ক লাগিয়েছেন মাত্র।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় মাঠে ক্যাডেট মাদরাসার বিষয়ে ইউএনও স্যারকে মৌখিক অভিযোগ করেছি। ক্যাডেট মাদরাসার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। বিদ্যালয়ে দুই গ্রুপের কারণে যতো ঘটনা। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১০১ জন। আমিসহ মোট শিক্ষক ছয় জন।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসার জ্যোতির্ময় চন্দ্র সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, আমি চীন সফরে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আপনার কাছ থেকে শুনলাম ও ভিডিও ক্লিপসে দেখলাম। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেবি