সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
পাহাড়ের মাটি উর্বর হওয়ায় এ মাটিতে আবাদ করা যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হয়। এই অঞ্চলের উর্বর ভূমিকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারিপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বল সুন্দরী বড়ই চাষ করে বেশ কয়েক বছরের মধ্যে লাখপতি বনে গেছেন। নিজে পেয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি, গড়ে দিয়েছেন কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবার খারাপ করে দ্বিতীয়বার টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে পেটের তাগিতে বেছে নিয়েছিলেন জেলে পেশা। কিন্তু নিজের মধ্যে জেদ জেগে উঠে কিছু করে তাকে দেখাতে হবে।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন, জেলে পেশা ছেড়ে দিয়ে নিজের পতিত পাহাড়ি জমিতে ফলজ বাগান গড়ে তুলবেন। যে ভাবনা সেই কাজ। লক্ষ্য অটুট রেখে কাজ শুরু করলেন। প্রাথমিকভাবে জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষাবাদ শুরু করে কৃষির প্রতি তার নেশা জেগে উঠে।
এরপর ২০১৬ সালে তার পতিত ১০ একর জমিতে বল সুন্দরী বড়ই চাষ শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তাকে আর পিছরে ফিরে থাকাতে হয়নি। অবশেষে ভাগ্য দেবী তার অধরাকে ধরা দিয়েছেন।
স্ত্রী, এক কন্যা সন্তান নিয়ে সুখী দম্পত্তি সুশান্ত তার জমিতে ৫০০টি বলসুন্দরী বড়ই গাছ রোপণ করেছিলেন। তার ঘাম জড়ানো পরিশ্রমে কয়েক বছরের মধ্যে গাছে ব্যাপক ফলন আসতে শুরু করে। গত মৌসুমে এসব গাছ থেকে তিনি ১০ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছিলেন। কর্মচারী এবং আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তিনি লাভের বেশ টাকা নিজের পকেট ভরেছেন। তার পরিশ্রম বৃথা যায়নি। কয়েক বছরের মধ্যে বনে গেছেন লাখপতি।
এইবারও মৌসুমের শুরুতে তিনি ৫০হাজার টাকার বড়ই বিক্রি করে ফেলেছেন। কিছু দিনের মধ্যে তিনি সব গাছের বড়ই বিক্রি করে ফেলবেন। এসব বড়ই বিক্রি থেকে খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে তার বিশ্বাস।
সফল এ কৃষি উদ্যোক্তা বড়ই চাষের পাশাপাশি তার বাগানে কফি, সুপারি, ড্রাগন, কলা, পেঁপে, মাল্টা, নারকেল, লটকন, লিচু, কাঁঠাল এবং সবজির মধ্যে বেগুন, টকফলসহ ২০ প্রজাতির ফলের চাষ করেছেন।
বড়ইয়ের মৌসুম শেষ হলে অন্যান্য ফসলের উৎপাদন শুরু হবে। এসব উৎপাদিত ফল থেকে তিনি আরও কয়েক লাখ টাকা ঘুরে তুলবেন। পুরো বছর জুড়ে তার বাগানে ফলের মেলা থাকে।
বাগানের শ্রমিক সুকুমার চাকমা বলছেন, তারা এ বাগানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছেন। তারাও এ বাগানের মালিকের কাছ থেকে শিখে নিজেদের পতিত জমিতে খুব শিগগিরই চাষবাদ শুরু করবেন।
বাগানের মালিক সফল কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। একজন উদ্যোক্তাই আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা।
রাঙামাটি সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মাকিছড়ি ব্লক) সোহেল রানা বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষিতে স্বয়ংসম্পন্ন বাংলাদেশ নির্মাণ করা। এ অঞ্চলে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার মতো কৃষির উন্নয়নে যারা কাজ করছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
জেবি