সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
প্রকৃতিতে শীত এবং বর্ষাকাল স্পষ্টভাবে বোঝা গেলেও অন্যান্য ঋতুর বৈচিত্র খুব একটা দেখা যায় না। নদীর চর এলাকা, বিরানভূমিতে কাশফুল ফুটলেই বোঝা যায় ঋতুর পরিবর্তন।
শরৎকালে গ্রামবাংলার প্রকৃতি কাশফুলের শুভ্রতায় ছেয়ে যায়। যে কারো মনে দোলা দিতে বাধ্য করবে শরতের এই সৌন্দর্য। ঋতুর রাণী শরৎএ খুশির তুফান জাগায় মানুষের প্রাণে। তাইতো চলতি পথেও ব্যস্ততা ভুলে পথিককের মন টানে প্রকৃতিতে। হিসেব-নিকেশের কঠিন জীবন থেকে কিছুটা সময় নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুলের শুভ্রতায় হারিয়ে যান অনেকে। তবে ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে শুভ্র কাশবন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগান সবুজের সমারোহ। চা বাগানের উঁচুনিচু টিলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ভুরভুরিয়া ছড়ার দুই পাড়ে কাশফুলের শুভ্র চাদর সেজেছে আপন খেয়ালে।
ছড়ার দুই পাড়ে দীগন্ত এলাকা জুড়ে বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের নাচন। এখানে আগতদের বাড়তি আকর্ষণ সবুজ চা বাগানের মাঝখানে সাদা কাশফুলের বন।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়ক ধরে এগোলেই দেখা মেলে দীর্ঘ এলাকা শুধু কাশফুলের শুভ্রতা। সবুজের রাজ্যে সাদা মেঘ যেন মাটি স্পর্শ করছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা রূপ নেয় অন্য এক লাবণ্যে। প্রতিবছরই দেখা যায় কাশফুলের সাদা একটা মিশ্রবর্ণ এই জায়গায় সৃষ্টি করে। বাতাসে ঢেউ তুলছে কাশফুল অসম্ভব সুন্দর একটি দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়। যার কারণে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন।
কয়েকজন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে গ্রামবাংলার প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। উজার হচ্ছে গাছপালা। ভরাট হচ্ছে জলাশয়। নদনদীর পাড়ের মাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে বালুখেকোদের কবলে পড়ে। প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে অনেকেই। এতে করে নদীপাড়ের ভারসাম্য হারাচ্ছে। উজার হচ্ছে সমতল চরাঞ্চল। এদের কবলে পড়ে কাশফুলও হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীতের মতো কাশফুলও চোখে পড়ে না বর্তমানে।
হবিগঞ্জের আহসান কবীর নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রকৃতির সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। এই কাশফুল প্রকৃতির বুকে ভিন্ন রকম সৌন্দর্য এনে দেয়।
কাশফুল যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি ফুল ঝড়ে যাওয়ার পর কাশফুলের ডগা সংগ্রহ করে ঝাড়ু তৈরি করা হয়। অনেকেই এগুলো কেটে নিয়ে যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজুল কাদের বলেন, কাশফুল বালু মিশ্রিত মাটিতে প্রচুর জন্মে। চরাঞ্চল এলাকায় প্রচুর জন্মে কাশফুল। প্রকৃতিতে যে শরত এসেছে, তা কাশফুল না ফুটলে টের পাওয়া যেত না। শরতের সৌন্দর্যই যেন এই কাশফুল। তাই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগলো।
কমলগঞ্জের তনু গুহ বলেন, শরৎ আসে নতুন রূপ নিয়ে। আর কাশফুল শরতের রূপের মধ্যে অন্যতম। এ সময় ছাতিমসহ নানা ধরনের সুগন্ধযুক্ত বুনো ফুল ফুটতে থাকে। আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা খণ্ড খণ্ড মেঘ। মেঘের ফাঁক গলে দেখা যায় স্বচ্ছ নীলাকাশ। আর ভোরে হালকা শিশির এবং মাঝে মধ্যে হালকা কুয়াশাভাব জানান দেয় দুয়ারে আসছে শীত।
ঋতুর রাণী শরৎএ খুশির তুফান জাগায় মানুষের প্রাণে। তাইতো চলতি পথেও ব্যস্ততা ভুলে পথিকের মন টানে প্রকৃতিতে। হিসেব নিকেশের কঠিন জীবন থেকে কিছুটা সময় নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুলের শুভ্রতায় হারিয়ে যান অনেকে।
জেবি