সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
সমাজে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেমগণের সঙ্গে হওয়া নানা রকম বৈষম্যের অবসান চান জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামি ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ।
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে বিভিন্ন বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে ভেরিভায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কোটা-কেন্দ্রিক বৈষম্যের অবসান হলেও আমাদের সমাজে আরও অনেক বৈষম্য বিরাজমান আছে। নতুন বাংলাদেশে সেসব বৈষম্যেরও অবসান হোক, এই কামনা সবার। দুঃখের বিষয় হলো, কিছু বৈষম্য নিয়ে সমাজে আলাপ-আলোচনা থাকলেও একটি বৈষম্য নিয়ে কেউ কথা বলে না। সেটি হলো, দাড়ি-টুপি-হিজাব এবং এর ধারক-বাহকদের প্রতি বৈষম্য। এ দেশের মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেমগণের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে নানা রকম বৈষম্যমূলক আচরণ চলে আসছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদের নবীজী (সা.) যে কয়টি গুরুদায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান নির্ধারিত হবে ব্যক্তির তাকওয়া ও আল্লাহভীরুতা-ভিত্তিক সততার মাধ্যমে। অথচ নবীজীর এই শিক্ষার প্রচারক ও ধারক-বাহকদের সঙ্গেই বৈষম্য করা হয় সব থেকে বেশি।’
শায়খ আহমাদুল্লাহর যেসব বৈষম্যের কথা উল্লেখ করেছেন তা নিম্নরূপ-
১. আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও আলেম সমাজ ও ইমাম খতিবদের জন্য সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই।
২. অন্যদের ছোটখাটো অবদানও অনেক ফলাও করে প্রচার হয়। অথচ আলম-সমাজ ও ধার্মিকদের বড় বড় অবদানগুলোকেও অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়।
৩. শুধু মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরি বা পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
৪. এদেশে কোনো গানের কনসার্ট হলে মিডিয়াগুলো ফলাও করে তার নিউজ প্রচার করে। অথচ কনসার্টের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোকের উপস্থিতির মাহফিলগুলো মিডিয়ার মনোযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে।
৫. বাজেটের সময় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, এমনকি রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকেও বাজেট ভাবনা জানতে চাওয়া হয়। অথচ আজ পর্যন্ত কোনো আলেমের কাছ থেকে বাজেট বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
৬. রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এমন অনেক ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ দেখা যায়, যারা এদেশের এক শতাংশ মানুষেরও হয়তো প্রতিনিধিত্ব করে না। অথচ সেসব বিষয়ে প্রচুর জনসম্পৃক্ত ও বিজ্ঞ আলেমদের অংশগ্রহণ সাধারণত দেখা যায় না।
৭. সকল যোগ্যতা থাকার পরও একজন টুপি পরিহিত বা শ্মশ্রুশোভিত যুবক যদি সংবাদ পাঠক হতে চায়, তাকে কি সংবাদ পাঠ করতে দেওয়া হবে? এটা কি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়? এটা কি ধার্মিকদের প্রতি বৈষম্য নয়?
৮. এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মস্থল, সবখানে দাড়ি-টুপি ও হিজাব পরিহিতরা বৈষম্যের শিকার হন। ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ এই সমাজের সাধারণ চিত্র। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
পোস্টের শেষ অংশে তিনি বলেন, ‘নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন দিনের এই সন্ধিক্ষণে আমরা চাই, অন্যান্যদের পাশাপাশি ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের সঙ্গে চলা সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটুক। নতুবা বিশাল জনগোষ্ঠী এভাবে জুলুম ও বৈষম্যের শিকার হতে থাকলে জমানো ক্ষোভ এক সময় বিস্ফোরণের রূপ ধারণ করবে।’
আরএ