দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করছেন।
সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে সারাদেশের মতো রাজধানীতেও চলছে পশু কোরবানি।
ঈদের দিন সকাল থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় পশু কোরবানি দিচ্ছেন নগরবাসী। ত্যাগের মহিমায় যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পশু কোরবানি করছেন নগরবাসী। কেউ কোরবানি দিচ্ছেন রাস্তায় থাকা নির্ধারিত স্থানে আবার কেউবা কোরবানি দিচ্ছেন বাসা বাড়ির গ্যারেজে। কোরবানির কসাইরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। চামড়া ছাড়িয়ে মাংস কাটার কাজ করছেন তারা।
এদিকে কোরবানির পর সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণ রাস্তায় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজধানীর থেকে কোরবানি বর্জ্য অপসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
জানা গেছে, আজ সকাল থেকে কোরবানি শুরু হয়ে সারাদিনই তা চলবে। আজ যারা কোরবানি করতে পারবেন না তারা আগামী দুই দিনও কোরবানি করার সুযোগ পাবেন।
মুসলিম জাহানের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আনন্দ আর খুশিকে ছাপিয়ে এ দিনটিতে বড় বিষয় ত্যাগের শিক্ষা। সামর্থ্যবান মুসলমানরা পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজ পশু কোরবানির দিন। কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পণই ঈদুল আজহার মূল মর্মবাণী।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছি, যাতে তারা ওই পশুদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই, তোমরা তারই অনুগত হও। (সুরা হজ : ৩৪)
সোমবার (১৭ জুন) ঈদগাহে জামাত আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের সব ঈদগাহে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সকালে সর্বপ্রথম ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা, এরপর শুরু পশু কোরবানির পর্ব।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, ঈদের দিন ছাড়াও পরের দু’দিনও পশু কোরবানি করার সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে বুধবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা ফরজ। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ বিলিয়ে দিতে হয় গরিব-মিসকিনকে। আত্মীয়দের দিতে হবে এক ভাগ।
হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘১০, ১১ ও ১২ জিলহজ—এই তিন দিন কোরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।’ আরেকটি হাদিসে আছে, জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়।
রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ রাজধানীতে ১৮৪টি ঈদগাহ ও প্রায় দেড় হাজার মসজিদে ঈদের নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। এবার ১৯৭তম ঈদের জামাত হবে এ ঈদগাহে। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে। ঈদের জামাতের সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কোরবানির ঈদ শুধু উৎসব না, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার একটি মেলবন্ধন। ঈদুল আজহা সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যকে এক কাতারে নিয়ে আসে। আধুনিক সমাজ যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে, তা থেকে মুক্তির দিশারী হতে পারে পশু কোরবানি। সমাজ ও রাষ্ট্রে ভ্রাতৃত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য গড়ার শিক্ষা হতে পারে ঈদে পশু কোরবানি।
আর তাই ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এর ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোরবানি ইবাদতের মর্যাদা লাভ করেছে। আল্লাহ যখন ইবরাহিম (আ.)-কে পরীক্ষা করার জন্য স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে বললেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে কোনো সংশয় তথা বিনা প্রশ্নে নিজ প্রিয় সন্তানকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান তিনি। কিন্তু আল্লাহর আদেশে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অসামান্য এ ত্যাগের মহিমা জাগ্রত রাখতে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কুরবানি করেন।
কে