দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) নাসিরুল ইসলামের মেয়ে লামিশা ইসলাম। তিনি বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০১৮ সালে অসুস্থতায় মা মারা গেলে ছোট বোন আর বাবাকে আগলে রাখতেন লামিশা ইসলাম। দুই কন্যার কথা চিন্তা করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবাও আর বিয়েও করেননি। সন্তানদের নিয়ে থাকতেন রমনার পুলিশ কমপ্লেক্সে।
শোকে বিহ্বল বাবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার একাধিক সহকর্মী জানান, লামিশা বাসার পাশেই ওই ভবনের কোনো একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। আগুন লাগার পর তিনি দৌড়ে ছাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাদে উঠতে পারেননি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া গিয়ে শ্বাসনালী পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারিও রমনা কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের লিফটে লামিশার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন বুঝতে পারিনি মৃত্যু তার এত কাছাকাছি।
তিনি ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্ট করেন। সেটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
"জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?"
‘‘জনাব মো. নাসিরুল ইসলাম বিপিএম স্যার অতি. ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট এন্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের পর হতেই নাসির স্যারকে একজন পেশাদার, নিবেদিত, দক্ষ, চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে দেখে এসেছি। বাংলাদেশ পুলিশে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে শতভাগ স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সততা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত পূর্বক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির অন্যতম রূপকার তিনি।
২০১৮ সালে হঠাৎ স্যারের সহধর্মিণী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্যারের দু'জন কন্যা। তারা তখন বয়সে অনেক ছোট ছিলো। আত্মজাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে স্যার পুনর্বার দ্বার পরিগ্রহ করেন নি। স্যারের কন্যাদ্বয় ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী, আত্মপ্রত্যয়ী, মেধাবী সন্তান হিসেবে স্যারের স্নেহমমতায় বড় হয়ে উঠে। রমনা পুলিশ কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের চারতলায় আমাদের বাসা ছিলো আর তিনতলায় স্যারের বাসা। মাঝেমধ্যে লিফটে স্যার এবং স্যারের কন্যাদ্বয়ের সাথে দেখা হতো। একদিন হঠাৎ জানতে পারি স্যারের বড়ো আত্মজা লামিশা ইসলাম বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। শুনে যারপরনাই আনন্দিত হই। মাতৃহীন সন্তানেরা পিতার স্নেহে গর্বিত সন্তান হিসেবে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি হতে বার্ষিক পুলিশ সপ্তাহ সূচনা হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ ব্রিফিং শেষ করে জরুরি প্রয়োজনে শিমুল ভবনে যাই। লিফট দিয়ে উঠার সময় লামিশার সাথে দেখা হয়। তার বুয়েট ভর্তি হওয়া নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারি। তখন ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারি নি মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের অংশ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিলো রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ। হঠাৎ শুনতে পারি বেইলি রোডে বহুতল ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং নাসির স্যারের কন্যা আটকে পড়েছে। সম্ভবতঃ সে ছাদে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে শুনতে পেরে স্বস্তিবোধ করি। এরপর অনুষ্ঠান শেষে বাসায় চলে আসি।
উৎকন্ঠা থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংবাদ দেখার এক পর্যায়ে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের ঘটনাস্থল হতে মিডিয়া ব্রিফিং প্রত্যক্ষ করে জানতে পারি যে, আমাদের একজন সহকর্মীর কন্যা ঐ ভবনে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন। তখনও নিশ্চিত ছিলাম না প্রয়াতের পরিচয় নিয়ে। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো প্রাপ্ত দু:সংবাদে চরম ব্যথিত, বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। নাসির স্যারের বড় আত্মজা বুয়েটের কেমিকৌশল শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। স্যার এবং স্যারের ছোট আত্মজার প্রতি গভীর সমবেদনা।
বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৫ জনের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করছি। ’’
এও