সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিরা হলেন, আমিনুজ্জামান ফারুক, মোখলেসুর রহমান ওরফে তারা ও একেএম আকরাম হোসেন।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মোখলেসুর রহমান ওরফে তারা ২০১১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নকলা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি নকলা পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার মো. মোখলেছুর রহমান তারা (৭০) শেরপুরের নকলা পৌর শহরের কুর্শা বাদাগৈর এলাকার মৃত ময়েজ উদ্দিন আহম্মদের ছেলে।
সূত্র মতে, মোখলেছুর রহমান তারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক শেরপুরের নকলা এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মোখলেছুর রহমান তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে শেরপুরের নকলা এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘর-বাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে জানা যায়।
এরই প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা রুজু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।
এরপর তাকে গ্রেপ্তারে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২১ জুন সকালে র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল ময়মনসিংহের ধোপাখোলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোখলেছুর রহমান তারাসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে নকলা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ছয়জনকে হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, নকলার চার রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। একই বছরের ৩১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলাকালে একজন আসামি এমদাদুল হক খাজা বয়সজনিত কারণে মারা যান।
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্না বলেন, বিজ্ঞ আদালতের রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও আমাদের আশা ছিল তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে। আসামিরা একাত্তরে এলাকায় শুধু হত্যাযজ্ঞই নয় নিরীহ মানুষের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, হামলা ও লুটতরাজের মতো সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তাই আজ তাদের সাজাতে নকলা উপজেলাবাসী কলঙ্কমুক্ত হলো।
জেবি