ইরানের সবচেয়ে প্রবীণ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদে রাজধানী তেহরানের কাছে আততায়ীর হামলায় নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাজধানীর দামাভান্দ এলাকায় আততায়ীরা প্রথমে তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় এবং পরে তার গাড়ি ঘিরে কয়েক দফা গুলি চালানো হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এ খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তেহরান। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান মোহসিন ফখরিজাদেকে নিয়ে যে গাড়িটি যাচ্ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেই গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হালমা চালায়। এরপর তার দেহরক্ষী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোহসিন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি মারা যান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এসব হত্যার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলে অভিযোগ করেছে তেহরান।
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভ্যুলেশনারি গার্ড এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বিদেশি শাখা কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। এরপর বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা চালায় তেহরান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইরানের এই বিজ্ঞানীকে হত্যার পরও সেই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে তেহরান।
পশ্চিমা বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের এই শীর্ষ বিজ্ঞানীকে দেশটির গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ছাড়া কূটনীতিকরা প্রায় মোহসিন ফখরিজাদেকে ‘ইরানের বোমার জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
ইরান সম্প্রতি ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এরইমধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল। বেসামরিক খাতে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরির জন্য এবং একই সঙ্গে সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি আবশ্যিক উপাদান। দেশটি সবসময় বলে এসেছে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করে।