সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলকে হটিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসমাইল হানিয়া।
সংগঠনটি ৯ মাসের বেশি সময় ধরে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধ করছে।
এতদিন ধরে যুদ্ধের নামে সব ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দমাতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। শক্তিশালী এই হামাসকে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
বুধবার (৩১ জুলাই) ভোরে ইরানের তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে তিনি নিহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তাকে হত্যা জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে হামাস।
এখন প্রশ্ন হলো কে এই ইসমাইল হানিয়া? কীভাবে তিনি হামাসের মতো শক্তিশালী প্রতিরোধ যোদ্ধাদলের নেতা হলেন?
নিউইর্য়ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ইসমাইল হানিয়ার পুরো নাম ইসমাইল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে ১৯৬২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার আদি নিবাস ইসরায়েলের অন্তর্গত আশকেলনে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে তার বাবা-মা আশকেলন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এরপর গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়ই তিসি হামাসে যোগ দেন। সে সময় বেশ কিছু দিন তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ১৯৮৭ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িককালে হানিয়া স্নাতক পাস করেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তাকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেপ্তার করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে তিনি বেশ কয়েক বার ইসরায়েলি কারাগারে সাজা ভোগ করেন।
১৯৯২ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে ইসরায়েল তাকে লেবাননে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তিনি ও অন্য ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি গাজায় ফিরে এসে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইয়াসিন ১৯৯৭ সালে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেলে ইসমাইল হানিয়াকে তার দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইসমাইল হানিয়ার উত্থানের পেছনের কারিগর তিনিই। হানিয়া আহমেদ ইয়াসিনের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।
ইয়াসিনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে হামাসের ভেতরে ইসমাইলের প্রভাব বাড়তে থাকে। এই সম্পর্ক এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হামাসের অনেক নেতা নিহত হলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় প্রতিরোধ যোদ্ধাদলে তার অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০৩ সালে ইয়াসিন ও ইসমাইলকে হত্যার চেষ্টা করে ইসরায়েল। তবে সেটা ব্যর্থ হয়। পরের বছর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ইয়াসিন।
তখন গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া শোকাহত জনতার উদ্দেশে ইসমাইল বলেন, ‘আপনাদের কাঁদতে হবে না। আপনাদের অবিচল থাকতে হবে। প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
২০০৬ সালে গাজায় তাকে হামাসের নেতা মনোনীত করা হয়। সেই বছর নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করলে তিনি গাজার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন। তবে কয়েক দিন পরই হামাস ও ফাতাহের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে তার সরকার ভেঙে দেয়া হয়।
২০১৭ সালে তাকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর নেতা নির্বাচন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কাতার ও তুরস্ক থেকে হামাসের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন হানিয়া। গাজা যুদ্ধের অবসান ও বন্দিবিনিময় চুক্তিতে তিনি বড় অবদান রেখে আসছিলেন।
কে