সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই সম্মুখ যুদ্ধ শুধুমাত্র যুদ্ধের ময়দানে হার-জিতের মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে না। এর ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজধানী ও অন্যান্য স্থান থেকে।
বর্তমানে রুশ বাহিনী থেকে অনেকটা পিছে রয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বেশ কিছু এলাকারও। এর মূলে রয়েছে গোলাবারুদের ঘাটতি।
রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করতে কিয়েভের ক্ষমতা পশ্চিমাদের ওপরই নির্ভর।
রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই কিয়েভকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সম্মুখ যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করে আসছে তারা। পাশাপাশি মস্কোসহ এর সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে কিয়েভ যতটুকু সহায়তা পেয়েছিল তা দিনকে দিন কমছে। তবে, পশ্চিমাদের সামনের দিকের কিছু সহায়তা ইউক্রেনীয় বাহিনীতে প্রভাব ফেলতে পারে। সেগুলো দেশ টিভির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
মার্কিন কংগ্রেসে সহায়তা প্যাকেজ
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের একটি প্যাকেজ আটকে রয়েছে। বিলটি পাস হলে বিরাট পরিমাণের সামরিক সহায়তা পাবে কিয়েভ বাহিনী। পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এটি কিয়েভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ গত সপ্তাহে মিউনিখে এক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে আমরা অপেক্ষা করি, এর মানে ইউক্রেনের সম্মুখ যুদ্ধে আরও বেশি লোক প্রাণ হারাবে।’
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মার্কিন সিনেটে একটি বিল পাস হয়েছে। সেই বিলে ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানকে সহায়তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু, রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদে এটি পাস হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এতে বাধ সাধছে ট্রাম্পপন্থী রিপাবলিকানরা। বিলটি আটকে দিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহায়তা বিল নিয়ে মিউনিখ সম্মেলনে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে তারা আশাবাদী। বিলটি পাস হলেও এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
গোলাবারুদ সরবরাহ
ইউক্রেন যুদ্ধ স্থলে নেমে এসেছে। উভয় পক্ষই প্রতিদিন হাজার হাজার আর্টিলারি নিক্ষেপ করছে। ২০২৩ সালের বেশিরভাগ সময় রাশিয়ার চেয়ে বেশি আর্টিলারি ছুড়েছে ইউক্রেন। তবে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কারণ, আর্টিলারি উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। পাশাপাশি মিত্র উত্তর কোরিয়া ও ইরান থেকেও আমদানি করছে তারা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক মাইকেল কফম্যানের অনুমান, ইউক্রেনের চেয়ে পাঁচগুণ আর্টিলারি ছুড়ছে রাশিয়া। ব্রিটিশ ডিফেন্স থিংক ট্যাংক আরইউএসআইয়ের বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রুক বলেন, ‘এই বছর কিয়েভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার আর্টিলারি উৎপাদন ছাড়িয়ে যেতে পারবে কি না এবং ইউক্রেনকে তাদের প্রয়োজনীয় আর্টিলারি সরবরাহ করবে কি না তা দেখতে হবে।’
অস্ত্রের সিদ্ধান্ত
দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র চেয়ে আসছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চাচ্ছে তারা। তবে, এখন পর্যন্ত চাওয়া সেসব অস্ত্র সরবরাহ করেনি পশ্চিমারা। এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে পশ্চিমাদের মনে।
ইউক্রেন সরকারের ঘনিষ্ঠ ন্যাটোর সাবেক প্রধান অ্যান্দ্রেস ফগ রাসমুসেন। তিনি বলেন, ‘এক রাতের মধ্যে আমরা আর্টিলারি উৎপাদন বাড়াতে পারবো না। তবে, ইউক্রেনের চাহিদা মতো অস্ত্র দেওয়া নিয়ে আমাদের দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ গত বছর থেকে কিয়েভকে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) দিয়ে আসছে পেন্টাগন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাঝারি পাল্লার ও পুরোনো। তবে, এবার ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চায় ওয়াশিংটন। এ নিয়ে কাজ করছে বাইডেন প্রশাসন। এতে করে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে হামলা চালাতে পারবে কিয়েভ। তবে, কিয়েভকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের ওপর নির্ভর করে। ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দিতে অনুমতি লাগবে আইনপ্রণেতাদের।
কিয়েভকে তাউরুস সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র সহায়তা দিতে চেয়েছিল ন্যাটো জোটভুক্ত কয়েকটি পশ্চিমাদেশ। তবে, এতে বাধ সাধে জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস। এই অস্ত্র দিলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুদ্ধ বাড়িয়ে তুলতে পারে। এবং যুদ্ধে জার্মানদের সরাসরি জড়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ
গত ৭ অক্টোবর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ফিলিস্তিনে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর জন্য পশ্চিমা নেতাদের দৃষ্টি এখন সেই দিকে। যুদ্ধটি অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সে জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আর তেমন ভাবাচ্ছে না পশ্চিমাদের।
এ ছাড়া গ্লোবাল সাউথের নেতারা গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করছে। যা কিয়েভকে আরও কঠিন সময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইউক্রেনের সমর্থনে আগের মতো র্যালি বা সমাবেশও হচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত ইউক্রেনের দূত ভেসেভোলড চেন্তসুভ বলেন, ‘এ জন্য রাশিয়া লাভবান হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
এম
সূত্র : রয়টার্স