সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
সামরিক অভ্যুত্থান ও স্বৈরাচার খুব কমই কোনো দেশের উপকারে আসে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে জনগণের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে ও সেখানে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তেমনটি কি সাম্প্রতিককালে কোনো সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলে হয়েছে? জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ও তার কিছু সহযোগীর দুষ্টু মূর্খতা ও অপরাধ তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধীদের চাপে রয়েছে তারা।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্স নামে পরিচিত মিয়ানমারের বিদ্রোহী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো ও সংখ্যালঘু সম্প্রাদয়গুলোর দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যমূলক বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের বিরোধী। গত অক্টোবরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে বিদ্রোহীরা। এতে সরকারি বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা আত্মসমর্পণ কিংবা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দেশটির বিভিন্ন অংশ দখল করেছে বিদ্রোহীরা।
তাদের আক্রমণ সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে, কমে গেছে মনোবল। প্রকাশ্যে জান্তাপ্রধানের সমালোচনাও হচ্ছে। কিন্তু, পিছু হটতে নারাজ মিন অং হ্লাইং। পশ্চিমাদের নতুন নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে জরুরি সময়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিমান ও আর্টিলারি হামলা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। যুদ্ধাপরাধের তালিকা দীর্ঘ করছেন মিন অং হ্লাইং।
জাতিসংঘের অনুমান, দেশটির সংঘাত পরিলক্ষিত করছে দুই তৃতীয়াংশ জনগণ। অভ্যুত্থানের পর দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৬ লাখ সাধারণ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে চার হাজারের মতো। ২০ হাজারের মতো লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশটির মোট জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
মিয়ানমারের জনগণের এই সীমাহীন যন্ত্রণার জন্য জাতিসংঘ সনদগুলো এবং মৌলিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক ব্যর্থতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো যথেষ্ট না করার জন্য সমালোচিত হতে পারে। তবে, তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানও এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি জোটটির কিছু দেশ জান্তা সরকারকেই সহযোগিতা করছে।
মিয়ানমারের এমতাবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী চীন। তাদের নেওয়া পদক্ষেপ হতাশাজনক। দেশটিতে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারেই তারা ব্যস্ত। মিয়ানমারে বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই দ্বৈত খেলা খেলছে। তারা কখনও জান্তা সরকার, আবার কখনো বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
তবে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের জন্য এই পদ্ধতিটি স্বাভাবিক। তিনি প্রায়শ পশ্চিমাদের উপদেশ দেয় অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার। কিন্তু, নিজেই তা মানেন না। চীন ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া একেচেটিয়াভাবে মিয়ানমারে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং স্বার্থপর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দেশটিতে নিয়মিতভাবেই হস্তক্ষেপ করে। চীনের এই ধরনের ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণ তাদের বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের দায়িত্বের স্পষ্টভাবে বিরোধিতা করে।
মিয়ানমারের মতো একই অবস্থা উত্তর কোরিয়ারও। পিয়ংইয়ংয়ের শীর্ষ নেতা কিম জং উনের ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক মিত্র বেইজিং। উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিকও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি। পিয়ংইয়ংয়ের অন্যতম বাণিজ্যিক সহযোগী বেইজিং। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশটিতে সবেচেয়ে বেশি খাদ্য পাঠায় চীন। হয়তো, তাদের সহযোগিতা না পেলে কিমের শাসন শেষ হয়ে যেতে পারে।
কিম পারমাণবিক অস্ত্রসম্পর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় বেপরোয়া হয়ে ওঠছে এব শি পেছনে বসে তা দেখছেন। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের সন্দেহ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অস্বস্তি দেখতে পছন্দ করেন শি। এ ছাড়া কিমের কার্যকলাপ যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ানের মনোনিবেশ করতে বাধা দিতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এম/ডিপি/