দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
হিযবুত তাহরির ও শিবিরের মত উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা হুমকিতে আছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর চিঠি প্রদান করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে এই চিঠি প্রদান করেন তারা। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, অতীতে যেভাবে সাইবার বুলিং ও সরাসরি বুলিংয়ের মাধ্যমে দমাতে না পেরে আরিফ রায়হান দ্বীপকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তন্ময়কে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়, একই প্যাটার্ন আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের ছবি ও ব্যক্তিগত পরিচয় গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভিসির কাছে লিখিত চিঠিতে শিক্ষার্থীরা জানান, ৩১ এ জুলাই (২০২৩) সুনামগঞ্জে আটককৃত ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, আমরা একটি মানববন্ধনের (আগস্ট ৬, ২০২৩) মাধ্যমে তার সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করি মহামান্য আদালতের কাছে, যেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল যে- ‘যদি কোনো শিক্ষার্থী আসলেই দোষী হয় তবে তার আমরা শাস্তি চাই, নির্দোষ সকলের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’ কিন্তু এই মানববন্ধনের পরেই বিষয়টি বদলাতে শুরু করে।
মানববন্ধনে দাঁড়ানোর কারণে (যারা এই দাবি করেছিলো) সকল ছাত্রদের ডেকে ডেকে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। নানাভাবে হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচ ও যার যার নিজ নিজ ব্যাচের ছাত্রদের দ্বারা। বিভিন্নভাবে হলে সীট বাতিল অথবা টার্ম বহিষ্কার এর ভীতি প্রদর্শন করে হয়। সিনিয়রদের একটি গ্রুপ অরিত্র ঘোষ এবং মিশু দত্তকে আনুমানিক সময় রাত ১১টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত আহসান উল্লাহ হলের কমন রুমে এবং মাঠে জবাবদিহিতা সম্পূর্ণ হলে দাওয়াত দিয়ে সবাইকে ডেকে এনে সবার সামনে আমাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয় এবং মৌখিক অপমানের শিকার হতে হয় আমাদের।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে ও পাবলিকভাবে আমাদের সবাইকে বুলি করা হয়, এমনকি সরাসরি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরবর্তীতে আমাদের সামাজিক বয়কটের হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও আমাদের চলাফেরা নজরবন্দী রাখা হয় এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে আমাদের চিহ্নিত করে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপমান করা হয়। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হলে, আমাদের ছবি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করা হয়। ২৬ তারিখে আমরা ক্যাম্পাসে রাতে কয়েকজন বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে কাচ্চি রান্না করে ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়া দাওয়া করি। কিন্তু এরপরই আমাদের নিয়ে সমালোচনা করা হয়, ক্যাম্পাসে রাজনীতি পরিচালনার মতো মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে বিভিন্ন ছাত্র নেতাদের উপস্থিত থাকার বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হয়।
এই শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা দেয়ার অভিযোগও করা হয় চিঠিতে। সেই সঙ্গে বুয়েটের যে সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখে বা তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে, সেই শিক্ষার্থীদেরও অপমান ও বুলিংয়ের শিকার হতে হয় বলে জানানো হয় চিঠিতে।
ভিসিকে চিঠি প্রদানের পর এই শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, আমরা ভয়ে আছি। অতীতেও এই প্যাটার্ন দেখেছি। আরিফ রায়তান দ্বীপ ভাইকেও প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং করা হয়। তারপরও তাকে দমাতে না পেরে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একইভাবে বুলিয়ের শিকার হন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ। তাকেও দমাতে না পেরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়।
শিক্ষাথীরা সাংবাদিকদের আরও জানান, আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় বিভিন্ন গ্রপে ও ম্যাসেজিং অ্যাপসে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘুরে দেখা যায় ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’ গ্রুপে শিক্ষার্থীদের ছবি ও শেয়ার করে বা কটাক্ষ করে একাধিক পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বখতিয়ার আমিন নামের একজন লেখেন, চোথা, ক্লাস নোট, গ্রুপ স্টাডি, বন্ধুত্ব বা অন্য যেকোন সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকুন। এদিকে বাঁশেরকেল্লার টেলিগ্রাম গ্রুপে ‘আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের উত্তরসূরী যারা’ -এমন শিরোনাম ব্যবহার করে উস্কানিমূলক পোস্ট প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে এই শিক্ষার্থীদের ছবি শেয়ার করে তাদের ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্যও চায় বাঁশেরকেল্লা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য চাচ্ছে। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। আমাদের রোল নম্বর দিয়ে বা বিভাগ ও হলের নাম পরিচয় দিয়ে পরবর্তীতে আমাদের ওপরও হয়ত হামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দ্বীপকে বর্বর ভাবে মাথায় ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বুয়েটেরই শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দিন। বুয়েটে হেফাজত ও শিবিরের কার্যক্রমের বিরুদ্ধ বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলো দ্বীপ। যার কারণেই সেখানে শিবির ও হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ইমামের উগ্রবাদী কার্যক্রমের কারণে রুখে দাড়ান দ্বীপ এবং সেই ইমাম বরখাস্ত হন। এরপর থেকেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপ ‘বুয়েটিয়ান’ এ কিছু শিক্ষার্থী দ্বীপকে নিয়ে আজেবাজে লেখালেখি শুরু করে দেয়। দ্বীপকে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। সর্বশেষ তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যার বিচার ১১ বছরেও পায়নি তার পরিবার। অতচ এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে অধিকাংশ সময়ই কথা তোলে না বুয়েটের ‘রাজনীতি বন্ধে’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে দ্বীপের মতই শিবির ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তৎকালীন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ। দ্বীপকে হত্যার মাস যেতে না যেতেই তাকেও নৃশংসভাবে কুপিয়ে মৃতভেবে ফেলে রেখে যাওয়া হয় রাস্তার এক পাশে। শরীরে ১০৩টির বেশি সেলাই নিয়ে চলছেন তিনি সেই নৃশংসতার সাক্ষী নিয়ে। কিন্তু এ ঘটনার কোন বিচারও এখন পর্যন্ত হয়নি।
এও