দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের প্রবাসী মাসুদের স্ত্রী সুমা আক্তার। দুই সন্তানের জননী সুমার জীবন এখন চরম অসহায়তার মধ্যে কাটছে। স্বামীর পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেও প্রতিপক্ষের অত্যাচারে আজ সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালে প্রবাসী মাসুদ পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সাড়ে তিন শতাংশ জমি স্ত্রী সুমাকে দান করেন। সুমা সেই জমিতে ৬টি দোকান ও একটি বাড়ি নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় আরেক প্রবাসী মিন্টু মিয়া মাসুদের বোনদের কাছ থেকে ওয়ারিশের অংশ কিনে সুমার জমি দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন। মিন্টুর পক্ষে তার শ্যালক সেলিম ও তার লোকজন একের পর এক হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। অবস্থা এতটাই চরমে পৌঁছায় যে, সুমা আদালতে দেওয়ানি মামলা করতে বাধ্য হন। আদালত উভয় পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও প্রতিপক্ষ সেই আদেশ উপেক্ষা করে সুমার বাড়ির বাথরুম আটকে দেয়াল তুলে দেয়। শুধু তাই নয় সুমার ভাড়া দেওয়া ৬টি দোকানের ভাড়াও বন্ধ রাখতে দোকানদারদের নির্দেশ দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।
নিজের দুই মেয়েকে নিয়ে সুমা এখন নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করছেন। জমির ন্যায্য অধিকার পেতে তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনা ক্যাম্প ও থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আজও পাননি ন্যায়বিচার।
দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সুমা বলেন, আমি একজন প্রবাসীর স্ত্রী। স্বামী দেশের বাইরে থাকায় প্রতিপক্ষরা সুযোগ নিচ্ছে। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমি ন্যায়বিচার চাই।
ভাড়া নেওয়া দোকান ব্যবসায়ীরা জানান, তিন বছরের চুক্তিতে সুমার নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে নিয়মিত ভাড়া দিয়ে আসছিলাম। এরই মধ্যে গত তিন মাস আগে আওয়ামী সরকার পতনের পর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন তাদের ভাড়া দিতে বন্ধ রাখার কথা বলে। তাই আপাতত ভাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারী নির্যাতন ও সম্পত্তি দখলের ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলেও তাদের পরিবার প্রায়শই হয়রানির শিকার হয়। সুমার ঘটনা সেই নির্মম বাস্তবতারই একটি উদাহরণ।
এদিকে, মানবাধিকার সংগঠন ও সচেতন মহল দ্রুত এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।
তাদের দাবি সুমার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক। সুমার মতো অসহায় নারীদের রক্ষা করতে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে আইনভঙ্গকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয় তাহলে সুমার মতো আরও অনেক নারী ন্যায়ের আশায় এভাবেই দ্বারে দ্বারে ঘুরতে বাধ্য হবে।
অভিযুক্ত মিন্টু মিয়ার শ্যালক সেলিম বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায় আমরা মেনে নেবো।
অন্যদিকে, স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, শান্তির লক্ষে দোকান ভাড়া বন্ধ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ